চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তা দেশবাসী মেনে নিবে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না হওয়া অব্দি নির্বাচন নয়।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড ময়দানের কনফারেন্স রুমে ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আরো বলেন, রাজনীতি- ইসলাম দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা নিজেদের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেছে। আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে রাজনীতি করি বলে কারো কোনো সহযোগিতা নিয়ে এমপি মন্ত্রী হতে রাজি হইনি।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ব্যানারে বিষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা ন্যায়ের পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে বার বার বার্তা দেয়ার চেষ্টা করে আসছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ৫৩ বছরের শাসকেরা ভারতের গোলামী করেছে। তারা জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সাজাতে হবে। অন্যথায় জুলাই বিপ্লব সফল হবে না। জীবনবাজি রেখে গুলির সামনে মাঠে নামার পরেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, আগামী দিনে যদি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সাথে বৈষম্য করা হয় তবে আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বিবেক বেঁচে দেয়া দলান্ধ কোন প্রজন্ম নয়। এই প্রজন্ম অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে। বিগত ১৫ বছরে ভারতের আধিপত্যবাদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে দাসত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খুনী শেখ হাসিনা খুনের বিষয়ে কোনো অনূশোচনা না করে আরো দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখতো একথা স্পষ্ট হয়েছে। সেভেন সিস্টারসকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের স্বার্থে ভারত ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে। চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দর, পার্বত্য এলাকা ও পাহাড়িদেরকে উস্কে দিয়ে অপতৎপরতার চেষ্টা হতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে নিরাপদ রাখতে পারলে বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে পারবো। ভারতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করা হয় না। আর বাংলাদেশে ভারতের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রচার করে বাংলাদেশের পরিবার প্রথাকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক সম্মানের হলে সে সম্পর্ক টিকে থাকবে। পৃথিবীর যেকোন দেশের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সাথে সাথে চট্টগ্রাম হুমকির সম্মুখীন। ভারত ৫৩ বছর নয় ৮৩ বছর পর্যন্ত ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। ভারতের সাথে ১৭টি চুক্তি করা হয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত নই। চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেবরা অতীতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে বক্তব্য দিয়ে এসেছেন। আওয়ামী লীগ আধিপত্যবাদীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওয়াদা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে না। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উদ্ধার হতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মো. নাজিমুদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাস্তা ঘাটে বা ব্যাক্তিগত যত না সমস্যা তার চেয়ে বেশি সমস্যা সচিবালয়ে। এটি ফ্যাসিজমের একটি অংশ। প্রশাসনে কেন ফ্যাসিজমের লোকরা এখনো আছে? তাদেরকে অপসারণ ও ইনেক্টিভ করে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। ফ্যাসিজমকে প্রশাসন থেকে দূরে রাখা সম্ভব না হলে সংস্কার কাজ ব্যাহত হবে।
বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. এস এম সরোয়ার আলম বলেন, ভারতের রাজনৈতিক আগ্রাসন আমাদের দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে হবে।
নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ মাহদী বলেন, ভারতের নাট্যমঞ্চে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। যেই দলের তৃণমূলের নেতা কর্মীদেরকে নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা নেই তাদেরকে আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চাই না।
গণ অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারী মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ভারত থেকে হাসিনাকে বিতাড়িত করে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের নিয়ন্ত্রণ মূলক কাজ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক আবদুর রহমান, ভারত বাংলাদেশকে ধ্বংস করে নিজেদের সুবিধার জন্য এমন কোন কাজ নেই যা তারা করেনি। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহ-সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ নির্মূল করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে চৌকস সেনাবাহিনীর অফিসারদেরকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদকে রুখে দাঁড়াতে না পারলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। আগামীর বাংলাদেশে আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ঠাঁই দিবো না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নিয়োগ পরীক্ষায় যারা চাকরি প্রার্থী হয়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে যারা বঞ্চিত হয়ে নিয়োগ পাননি তাদেরকে চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদেরকে পুলিশকে পুনর্গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, চট্টগ্রামে আদালত চলাকালীন সরকারি আইনজীবী হত্যা করা হয়েছে। এমন ঘটনা যদি ভারতে হতো মুসলিমরা সরকারের হিন্দু আইনজীবী হত্যার ঘটনা ঘটলে তারা কি করতেন? সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আল ফুরকান বলেন, একটি কল্যাণমূখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য জরুরি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা খান তালাত মোহাম্মদ রাফি, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মোহাম্মদ রিজুয়ান সিদ্দিকী, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সভাপতি কাজী মজিবুর রহমান মুজিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.হুমায়ুন কবীর খালুভী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি আল মোহাম্মদ ইকবাল, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এডভোকেট পারভেজ তালুকদার প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ