নিজস্ব প্রতিবেদক: আতশবাজির ফোয়ারা, আগুনের খেলা, ঢোলের তালে তালে তরুণদের নাচ আর হাজারো ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে উদযাপিত হলো প্রবারণা উৎসব। নগরের নন্দনকাননে সবচেয়ে বড় উৎসব হলেও রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলার বৌদ্ধমন্দির কেন্দ্রিক এ উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ডিসি হিলের নন্দনকানন মোড়ের অস্থায়ী মঞ্চে ফানুস উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মেধাবী তরুণদের সৃজন ও মননশীলতায় চিরায়ত অবয়বের পাশাপাশি এবারের ফানুসে এসেছে বৈচিত্র্য।
আকার, নকশা, নির্মাণশৈলীর গুণে দর্শকদের নজর কাড়ে ব্যতিক্রমী ফানুসগুলো। একটি ফানুস ফুটে উঠেছিল মানুষের হাত, মাথা ইত্যাদি। আরেকটি ফানুস ছিল বাংলাদেশি স্যাটেলাইটের মতো দেখতে। বেশ কিছু ফানুসে ছিল মৈত্রী ও সম্প্রীতির বার্তা। ফানুস উৎসবে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একাধিক টিম সতর্ক অবস্থানে ছিল। ছিল রেড ক্রিসেন্টসহ মেডিক্যাল টিমও।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল চারটা থেকে নন্দনকানন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ মন্দির মোড়, ডিসি হিল মোড় অভিমুখী সব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে সিএমপি। নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়, লাভ লেন মোড় (নুর আহম্মদ সড়কের মাথা), এনায়েতবাজার মোড়, বোস ব্রাদার্সের মোড়ে (পুলিশ প্লাজার সামনে) রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হয়।
উৎসবে অংশ নিতে আসা রাজু চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তির এই পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য একটি আবশ্যক বিধিবদ্ধ নিয়ম। প্রবারণা পূর্ণিমা আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের আয়োজন হলো প্রবারণা। সহজ কথায় বললে অসত্য ও অকুশল কর্মকে বর্জন করে সত্য ও কুশল কর্মকে বরণ করা। প্রবারণার অর্থ দাঁড়ায় ‘নিষেধ করা’, দোষত্রুটি স্বীকার, শিক্ষা সমাপ্তি, ‘অভিলাষ পূরণ’, ‘আশার তৃপ্তি’, ‘প্রকৃষ্টরূপে বরণ করা’ প্রভৃতি।
তিনি জানান, সাধারণ গৃহীরা সকাল থেকে বৌদ্ধবিহারে পূজা উত্তোলন, সূত্র পাঠ এবং পঞ্চশীল ও অষ্টশীলব্রত পালন করে সারা বিশ্বের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে সমবেত প্রার্থনা করেছেন। জগতের সব প্রাণীর দুঃখ হতে মুক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করেছেন। বিকেলেও একইভাবে বিহারে সমবেত প্রার্থনা করা হয়। পরে বুদ্ধের উদ্দেশে ফুল পূজা, বুদ্ধপূজা, বুদ্ধমূর্তি দান, অষ্টপরিষ্কার দান, সংঘ দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিণ্ডদান অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া আগতরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে ধর্মদেশনা শুনেন।