চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ইঞ্জিন সংকটে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পরিবহণ করতে পারছিল না রেল। এমন পরিস্থিতিতে রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনের মতো পণ্য ও তেলবাহী ট্রেনের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এতে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই (চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড) স্টেশন থেকে চারটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা যায়নি। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৯৬ শতাংশই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে আনা-নেওয়া হয়। বাকি ৩ শতাংশ রেলপথে ও ১ শতাংশের কম নৌপথে পরিবহন হয়। বন্দর ও রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০টি কনটেইনার পরিবহন করা হয়।
জানা গেছে, ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু করেন রানিং স্টাফরা।
রেলের রানিং স্টাফরা হলেন- ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত পরিচালক (গার্ড), ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার।
প্রথম দিনেই চলেনি চার পণ্যবাহী ট্রেন
সিজিপিওয়াই থেকে চারটি ট্রেনের মধ্যে কনটেইনারবাহী তিনটি ট্রেন সোমবার রাত ২টা, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা ও বেলা ২টা এবং তেলবাহী ট্রেন সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এই চারটি ট্রেনে ১২০টি কনটেইনার ও ট্যাংকবাহী ওয়াগন রয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবারের নির্ধারিত তিনটি কনটেইনারবাহী ট্রেন ঢাকায় এবং তেলবাহী ট্রেনটি রংপুরে যাওয়ার কথা ছিল। কনটেইনারবাহী ট্রেনে পোশাক কারখানার পণ্য, বিভিন্ন কারখানার যন্ত্রপাতি রয়েছে।
চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থিত সিজিপিওয়াইয়ের স্টেশনমাস্টার আবদুল মালেক জানান, এমনিতে ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেনে করে পণ্য পরিবহনে চাপ রয়েছে। এর মধ্যে আজকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আরও বেশি চাপ তৈরি হয়েছে। এক দিন ট্রেন বন্ধ থাকলে পণ্যবাহী ট্রেনের সময়সূচি ওলট-পালট হয়ে যায়। তখন আবার নতুন সময়সূচি মেনে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ট্রেনে কনটেইনার ওঠানামা এবং তা নির্ধারিত সময়ে গন্তব্য পৌঁছে দেওয়ার ঝক্কিঝামেলা তো আছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডিতে (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল) একক কনটেইনারের ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৮৭৬। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে ১ হাজার ৪৯ একক কনটেইনার। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি কনটেইনার আছে ১৭৩টি বেশি। ট্রেনের চলাচল বন্ধ থাকলেও এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের অক্টোবরে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করেছিল ১৫৩টি। নভেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ১৩৮টিতে। আর ডিসেম্বর মাসে অক্টোবরের তুলনায় ৫০টি কম ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া তেলবাহী ট্রেন চলাচল করেছে অক্টোবরে ৬১টি। নভেম্বরে চলে ৫৫টি। ডিসেম্বরে অর্ধেক কমে দাঁড়ায় ২৯টিতে।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক সময় মেনে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিদিন ৫-৬টির বেশি পাওয়া যায় না। ফলে নিয়মিত ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম বলেন, পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা মানে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন এক দিন পিছিয়ে যাওয়া মানে আর্থিকভাবে ক্ষতি হওয়া। কেননা বন্দরে বেশি দিন কনটেইনার রেখে দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বাড়তি সময় কনটেইনার রাখলে মাশুল দিতে হয়। তাছাড়াও ট্রেন থাকলে বন্দরে জট তৈরি হয়ে যাবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ