চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : প্রতারণা মামলায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের জসিম উদ্দীন সিআইপি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও সমন জারি করেছেন।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বলে জানান মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এমজাদ হোসেন।
প্রতারণা মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি জসিম উদ্দিন বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব চরনদ্বীপ এলাকার খলিল তালুকদার বাড়ির মঞ্জু বেগমের ছেলে ও পিতা শ্রীপুর ভাঁ-ফকির মাজার সংলগ্ন এলাকার মো. জেবল হোসেনের ছেলে।
মো. জসিম উদ্দীন (৪৭) ও তার স্ত্রী মোছাম্মৎ রুমা আকতার (৩৯) সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মো. ইলিয়াছ জাফর বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ। যার সিআর মামলা নং ৪৮২/ ২০২৩।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি জসিম উদ্দীন ও বাদী মো. ইলিয়াছ জাফর এক সময় বিদেশে যৌথভাবে ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ফলে মামলার জসিম উদ্দীন, মো. ইলিয়াছ জাফরকে আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী চৌমুহনী সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু টানেল এলাকায় একটি জায়গা ক্রয় করার প্রস্তাব দেন। জসিমের কথায় ইলিয়াছ জাফরসহ আরও ৫ জন যৌথভাবে তা ক্রয় করতে রাজি হন। ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ৯০ শতাংশ জায়গাটি কিনতে ২০১৭ সালের গত ১৩ নভেম্বর জসিম ও ইলিয়াছ জাফরসহ বাকি পাঁচজনের অংশীদারে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রার্ড বায়নানামা (৪৮২২/১৭) দলিল করা হয়। যে অংশীদারে ইলিয়াছ জাফরের ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা ছিল। দলিলে উল্লেখ ছিল ৯০ শতাংশ জমির সরকারি কর, খাজনাদি আদায়পূর্বক নির্ভেজাল, নিষ্কন্টক করে দেওয়া সাপেক্ষে পাওনাদারের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করে ৭ জনের নামে রেজিস্ট্রি দিতে বাধ্য থাকবে বিক্রেতাগণ।
পরবর্তীতে ইলিয়াছ জাফর ব্যাবসায়ীক কারণে বিদেশে অবস্থানকালে সম্পত্তি রেজিস্ট্রির জন্য বিদেশ থেকে জসিম উদ্দীনের ইষ্টার্ণ ব্যাংক লি. জুবলী রোড শাখায় ২০১৮ সালের ৭ মে ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে আসামি জসিমসহ ৭জন অংশীদারের মধ্যে মো. মুছা ও মো. আবু বক্করের সমন্বয়ে যৌথ একাউন্ট করা হলে ইলিয়াছ জাফর বিদেশ থেকে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লি. মুরাদপুর শাখায় আরও ৮ লাখ টাকা পাঠান। জমির মূল্য ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা হিসেবে বাদী ইলিয়াছ জাফরের ভাগে ৪৫ লাখ টাকা পড়লেও জমির মূল্য পরিশোধ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য কাজের খরচ দেখিয়ে মোট ৬৩ লাখ ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, তফসিলোক্ত বায়নাকৃত ৯০ শতাংশ জমির মধ্যে পুনরায় ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ জমির মূল্য দুই কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করে আগের বায়নাকৃত এক কোটি টাকা নগদে গ্রহণ ও অবশিষ্ট এক কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা তিনশ’ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ইলিয়াছ জাফরের নাম ও দস্তখত জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা প্রাপ্তির তারিখবিহীন রশিদপত্র তৈরি করেন।
সেই টাকা গ্রহণ করে তফসিলোক্ত সম্পত্তি ইলিয়াছ জাফরসহ ৭ জন অংশীদারের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা থাকলেও গত ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি আসামি জসিমের কুপ্ররোচনায় অন্যান্য আসামিরা ইলিয়াছ জাফরসহ ৭জন অংশীদারের নামে সাব কবলা রেজিস্ট্রি না দিয়ে গোপনে জসিম উদ্দীনের স্ত্রী মোছাম্মৎ রুমা আকতারের নামে সম্পত্তি থেকে ৪৯ দশমিক ১১ শতক সম্পত্তির (দলিল নং- ১৪৩/১৯) আমমোক্তারনামা দলিল তৈরি করেন।
পরবর্তীতে ইলিয়াছ জাফর এ বিষয়ে অন্যান্য আসামিদের সাথে যোগাযোগ করলে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি বিষয়ে তারা কিছুই জানে না বরং সবকিছু জসিম উদ্দীন জানেন বলে জবাব দেন। আসামিদের কথায় সন্দেহ হলে মামলার বাদী ইলিয়াছ জাফর জসিম উদ্দীনকে ১ নং আসামি করে মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর/দক্ষিণ) চট্টগ্রাম মামলার তদন্ত তদারকি করছেন। তদন্ত রিপোটের্র উপর ভিত্তি করে প্রতারণার মামলায় মো. জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং ২ নং আসামি তার স্ত্রী রুমা আকতারের বিরুদ্ধে আদালত সমন জারি করেন। তবে আসামি জসিম উদ্দিন গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এমজাদ হোসেন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, পূর্বের ব্যবসায়িক সম্পর্কের সুবাদে জমি কেনার কথা বলে আসামি জসিম উদ্দীন সুকৌশলে বাদী মো. ইলিয়াছ জাফরের সাথে প্রতারণা করেছেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। একইসঙ্গে তার স্ত্রী মোছাম্মৎ রুমা আকতারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন মহামান্য আদালত।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ