চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, এনবিআরের ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর আদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো বা পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো করা হবে। আমরা যদি শতভাগ অটোমেশনে যেতে পারি তাহলে আন্তর্জাতিক বন্দরের স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করতে পারবো।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বিষয়টি জানান।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সব আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। বন্দরের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে দেশের প্রবৃদ্ধি। দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু বন্দর। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পারলে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। আমাদের সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে নাহলে উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। বন্দরকে কত গতিশীল করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা সবসময় কাজ করবো।
তিনি বলেন, আমাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২-৩ মিলিয়ন টিইইউস বাড়াতে হবে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে। তাই আমরা বে টার্মিনালের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করেছি। সেখানে আমরা ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। বিশ্বব্যাংক যে আমাদের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের কমিটমেন্ট করেছে, এক্সেস চ্যানেল, নেভিগেশন চ্যানেল এবং ব্রেক ওয়াটার করার জন্য সেই কাজটা আমরা এখন দ্রুতগতিতে ফার্স্ট ট্রেকে করছি। আশাকরি আগামী মার্চ-এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাবে। তারপর ইনশাআল্লাহ বে টার্মিনালের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। যাতে ২০২৮-২৯ এর মধ্যে আমরা এ কাজটা শেষ করতে পারি।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, মাতারবাড়ীতে ইতিমধ্যে বন্দরের উন্নয়নের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেটা সরকার অনুমোদন করেছে। এ কাজটা ফার্স্ট ট্রেকে করছি। আশাকরি, ২০২৮ এর মধ্যে এটা শেষ হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে এখন কিন্তু আমাদের মার্কেট এখানে চলে এসেছে। বিশেষ করে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট যেটা হবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়ান দেশের সঙ্গে। ২০২৭-২৮ এ আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন এটি কার্যকর হয়ে যাবে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, এটা হলে আমাদের আমদানি রপ্তানি বাড়বে। যদি সাপোর্ট করতে না পারলে প্রতিবন্ধকতা হয়ে যাবে। যদি সম্ভব করতে পারি তাহলে আশীর্বাদ হয়ে যাবে। সিঙ্গাপুরের মতো। এটা নির্ভর করছে কীভাবে বন্দরকে এগিয়ে নেব। কনটেইনার জট কমাতে রেলওয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত আগস্ট মাসে বন্দরে কনটেইনার ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার টিইইউস, এখন তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনতে পেরেছি। নরমাল অপারেশনের পাশাপাশি জট ক্লিয়ার করা সহজ ছিল না। রেলওয়ে, কাস্টমস এবং আমরা সম্মিলিতভাবে করেছিলাম বলে সম্ভবপর হয়েছিল। আমরা যদি একসাথে কাজ করি তাহলে বড় ধরনের কাজ করে ফেলতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এ আস্থা আমরা অর্জন করেছি, এটা ধরে রাখতে হবে।
কেউ যেন বন্দরকে ক্ষুদ্র স্বার্থে অপব্যবহার করতে না পারে। সেদিকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র স্বার্থ বড় স্বার্থকে বিপন্ন করতে পারে। আশাকরি, ২০২৫ সাল আরও অর্থবহ হবে। বন্দর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০২৪ সালে ৭ দিন ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা, বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও বন্দরের গতিশীলতা ধরে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। বন্দরের ভেতরে শৃঙ্খলা আছে। যানজট নেই। গিয়ারলেস, গিয়ার ভ্যাসেল ম্যানেজমেন্ট করেছি আমরা। যাতে শতভাগ বার্থ ব্যবহার করতে পারি, শতভাগ কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারি। কাস্টমস, এনবিআর, বন্দর, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করেছি। এটা আমাদের স্ট্রেংথ। আমরা কিছু জায়গায় টেকনোলজির সাহায্য নিয়েছি। গেটে আগে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো একটি পণ্যবাহী গাড়িকে। ম্যানুয়ালি গেটপাস দেওয়া হতো, টিকিট দেওয়া হতো, পেমেন্ট করা হতো। এখন ইলেকট্রনিক করে ফেলেছি। এখন ১ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। ভেতরে মুভমেন্ট ফার্স্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভেতরে আমরা অনেক জায়গা বের করেছি। এতে কাজ বেশি হচ্ছে, সময় কম লাগছে।
দুর্বল ব্যাংকে বন্দরের টাকা জমা রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কমিটমেন্ট পূরণ করছে। কিছু কিছু আদায় হচ্ছে। যে ব্যাংকগুলোর রেটিংস ভালো সেখানে বিনিয়োগ করছি। এটা নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টার আছে। আমাদের কোনো চিন্তা নেই।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) রপ্তানির কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে। স্ক্যানারের সমস্যার কারণে ইমপোর্ট হ্যান্ডলিং করতে পারছে না। এনবিআর স্ক্যানারের পারমিশন দিয়েছে, কিনতে সময় লাগবে। উনাদের ক্রেন ও অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট অল্পদিনের মধ্যে চলে আসবে। তখন ইমপোর্ট কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে। আমাদের লস নেই। কারণ পয়েন্ট ফাইভ মিলিয়ন টিইইউসের যে ক্যাপাসিটি চার্জ তা আমরা পাচ্ছি। সেটা তারা পরিশোধ করছে। উনাদের হ্যান্ডলিং হোক বা না হোক আমাদের লাভ। ভবিষ্যতে হয়তো বা উনারা ওভারকাম করবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লালদিয়ায় ইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি করছি। বে টার্মিনাল এলাকায় আমরা ট্রাক টার্মিনাল করছি। এ ছাড়া বড় জাহাজ আনার উদ্যোগ নিচ্ছি। ছোট জাহাজ একটু কমিয়ে দিতে চাই। এক জাহাজে ২৫০০ টিইইউস আনলে ১২০০ টিইইউসের ২টি জাহাজ আসতে হবে না। অফডকগুলো আমাদের চালু করতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এফসিএল কনটেইনার অফডকে নিতে পারি তাহলে ১ মিলিয়ন টিইইউস সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ওপেন আইজিএম করার চিন্তাভাবনা করছি। যাতে পানগাঁও এবং অন্যান্য জায়গায় অপারেশন সহজ করতে পারি। সুন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ৪-৫ বছর সমস্যা হবে না। অপারেশন টপ প্রায়োরিটি দিচ্ছি। প্রযুক্তি আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কাস্টম, এনবিআর, পোর্ট, ব্যাংক ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যদি কাজ করতে পারি, পেপারলেস যদি করতে পারি তাহলে সব ফার্স্ট হয়ে যাবে।
তিনি জানান, আইএসপিএস কোডের কমপ্লায়েন্স আমরা শতভাগ মেনে চলি। কিছুদিন আগে অডিট হয়েছে। তারা খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ইউএস কোস্টগার্ড এ মাসে আসবে। উনারাও অডিট করবে। তারা আমাদের গাইডলাইন দেবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ