পড়া হয়েছে: ১৮
চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ভারতের পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার খবরে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। সামনে এ দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর, জিনজিরা এবং রাজধানীর হাতিরপুল ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এতে নতুন করে বাড়ছে দাম।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। সকালে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আর ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির খবরে সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকার ওপরে।
দাম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজেরও। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে সকালে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১৫ টাকায়। আর ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির খবরে সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে পাইকারিতে প্রতি ৫ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কারসাজি শুরু করছেন দেশের পাইকারি মোকামগুলো। দাম বেশির প্রত্যাশায় অনেক মোকাম বিক্রি বন্ধ করেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের মো. সেলিম মল্লিক বলেন, বাজারে পেঁয়াজ কম। পাশাপাশি ভারতের পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞার খবরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছেন। তবে নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে ওঠা শুরু হলে দাম কমে যাবে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মেসার্স আহসান বাণিজ্যালয়ের আক্কাস জোয়ার্দার বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তাই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তাই সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সাময়িক বেড়েছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। এমনিতেই বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। নিষেধাজ্ঞার এ খবরে দাম আরও বাড়ছে।
তবে পেঁয়াজের এই ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে আবারও ৩০০ টাকা ছাড়াতে দাম।
এদিকে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তবে এর আগে দাম স্থিতিশীল রেখে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম রফতানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টনে ৮০০ ডলার আরোপ করা হয়েছিল।
এদিকে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও শর্তসাপেক্ষে পেঁয়াজ রফতানি করা যাবে বলে জানিয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। বলা হয়, কোনো দেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের আবেদনের ভিত্তিতে অনুমতি মিললই হবে রফতানি।
শর্ত সম্পর্কে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন এই বিজ্ঞপ্তি জারির আগে জাহাজে লোড করা পেঁয়াজ রফতানি করা যাবে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি জারির আগে শিপিং বিল দাখিল করা হয়েছে এবং পেঁয়াজ লোড করার জন্য জাহাজগুলো ইতোমধ্যে বার্থ করেছে বা পৌঁছেছে এবং ভারতীয় বন্দরে নোঙর করেছে এমন তথ্য নিশ্চিতের পর রফতানির অনুমতি মিলবে।
আর বিজ্ঞপ্তি জারির আগে পেঁয়াজের চালান কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে বা চালানগুলো রফতানির জন্য কাস্টমস স্টেশনে প্রবেশ করেছে এমন তথ্য নিশ্চত সাপেক্ষে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দেয়া হবে।
তবে পেঁয়াজ রফতানিতে নতুন এ নিষেধাজ্ঞার ফলে আগামী জানুয়ারিতে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দামে বড় ধরনের পতনের আশঙ্কা করছেন দেশটির ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।