হাসান সৈকত : পূর্ব রেলের চীফ পার্সোনাল অফিসার (সিপিও) জোবেদা আক্তার। নিজেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাগ্নি পরিচয় দেওয়া এই অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, অর্থের বিনিময়ে কারও অপরাধ গোপন করাসহ নানা অভিযোগের শেষ নেই। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুদকের একাধিক মামলা, তবুও পদোন্নতিতে সবার শীর্ষে তিনি।
রেল সূত্রে জানা যায়, চাকরিতে যোগদানের শুরু থেকে বেশ বেপরোয়া এই জোবেদা আক্তার। রেলওয়ের ৮৬৩ খালাসী পদে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। অবৈধ কার্যকলাপে অর্জন করেছেন প্রচুর বেআইনি সম্পদ।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রেলওয়ের কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি শেখ মো. লোকমান হোসেনের মেয়ে জিনিয়া নাসরিনের সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে প্রায় ১৪ বছর যাবত দ্বৈত পেশায় নিয়োজিত থাকার বিষয়ে দুদকের নির্দেশনা না মানা ও তা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায়, তার অবৈধ টাকা দিয়ে নিজের এক ভাই ও বোনকে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও সে এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। তবে নিরব ভূমিকা পালন করছে রেলওয়ে প্রশাসন।
এছাড়াও কর্মচারী হয়রানি যেন সিপিও জোবেদার নিত্যদিনের কাজ।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে একাধিক কর্মচারী বলেন, জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও কিভাবে সে চীফ পার্সোনাল অফিসার পদে পদোন্নতি পান?
আওয়ামী-লীগের মাফিয়া রানী হিসেব খ্যাত রেলের জোবেদা এখনো ভিন্নরূপে চালাচ্ছেন তার ক্ষমতার দাপট।
জানা যায়, পতিত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকায় বাড়ি হওয়ায় নিজেকে ভাগ্নি পরিচয় দিয়ে একাধিক দুর্নীতি থাকার পরও একের পর এক পদোন্নতি লাভ করেন। হয়েছিলেন অতিরিক্ত চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পূর্ব)। সর্বশেষ তদবির করে বনে যান চীফ পার্সোনেল অফিসার।
সিপিও পূর্ব পদে দায়িত্ব নিয়েই কর্মচারীদের উপর চালাতে থাকেন বৈষম্যমূলক বদলী ও পদায়ন।
রেলওয়ে কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, জোবেদা আক্তার নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের দেবর সাইফুলকে স্টেশন মাস্টার পদে চাকরি দিয়ে ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশনে পোস্টিং দিয়ে রেখেছেন। সকল ষ্টেশন মাষ্টারদের বদলী হলেও তার দেবরের বদলী অদ্যাবদি হয়নি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্ধকৃত গাড়ি ব্যবহার না করেও জ্বালানি তেল উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।
ইতোমধ্যেই চীফ পার্সোনাল অফিসার জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে দুদক চেয়ারম্যান ও রেল উপদেষ্টার কার্যালয়ে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সিনিয়র আয়কর আইনজীবি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন জোবেদা আক্তারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ব্যাপারে সিনিয়র আয়কর আইনজীবী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশ এখনো দোসরমুক্ত হয়নি। যারা দুর্নীতি করে তারা সকলেই এক একজন দোসর। দেশকে আগে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে, তবেই দেশ উন্নত হবে।
তিনি বলেন, রেল যেন দুর্নীতির আখড়া। রেলকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হলে আগে সকলকে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে।
এদিকে, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে চীফ পার্সোনাল অফিসার জোবেদা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চাটগাঁ নিউজকে বলেন, রেলে অনেক দুর্নীতি। আমি রেলকে ঢেলে সাজাতে এসেছি। প্রতিদিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ আমার দপ্তরে জমা হয়। আমরা এর জন্যে আলাদা টিম গঠন করছি। রেলে আর কোন দুর্নীতি থাকবে না, দুর্নীতি নির্মূল করেই ছাড়বো।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ