চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : পুলিশের পোশাক পরে দুর্বৃত্তরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ তুলেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে নামার সঙ্গে সঙ্গে সরকার তাদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল করে। ২০১৮ সালে সরকারই তো এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। সেটা আবার হাইকোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছিল। আপিল বিভাগ সেটার ওপর আবার স্থিতাবস্থা দেয়। যেহেতু বারবার এরকম হচ্ছে, তাই ছাত্ররা দাবি করেছিল কোটা সংস্কার করে একটি আইনি কাঠামো করে দেওয়ার।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ঘাটতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে ছিলেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন। দুই মন্ত্রীর উদ্যোগে যখন ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হলো, তখন আমরা ঢাকা শহরে, সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস, তাণ্ডব ও সন্ত্রাস দেখলাম। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে যাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না, তারা তাড়াহুড়ো করে রাজধানীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা করল।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুলিশের পোশাক পরে দুর্বত্তরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। দুর্যোগ ভবনে আগুন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্ভার স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হলো। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে সংবাদের কনটেন্ট আগে থেকেই তৈরি করে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে একটি পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল।’
‘এত রক্তপাত, হতাহতের ঘটনা আমি কখনও দেখিনি। ১৯৭১ সালে যেভাবে রাজাকার-আলবদররা সাধারণ মানুষকে খুন করেছে, নারীদের ধর্ষণ ও লুটপাট করেছে, একই দৃশ্য আমরা দেখলাম গত কয়েকদিনে। ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে তারা যেভাবে ধ্বংসলীলা চালালো, সেটা সবাই দেখেছে। ছাত্ররা স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এ ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমাদেরও দাবি-আন্দোলন ছিল। আমরা সচিবালয় ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। কিন্তু কখনও ঢুকে আক্রমণ করিনি। ছাত্ররা আন্দোলন করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ভুল ত্রুটি, ভালো-মন্দ যা-ই থাক, তরুণদের মধ্যে একটি বোঝাপড়া আছে। সেই বোঝাপড়া দিয়ে তারা মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন করেছে।’
বিদেশ থেকে উসকানি এসেছে, এমন অভিযোগ করে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশ দখল করতে বিদেশ থেকে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সে উসকানিতে মির্জা ফখরুল বললেন— কোটা আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি আছে, সরকার উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিন্তু এখন মির্জা ফখরুল বলছেন— এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা নেই, আমরা সমর্থন দিয়েছি, সম্পৃক্ত হইনি। এতবড় অভিনেতা আমি কোনোদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখিনি।’
কারফিউ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে আনন্দিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যম এত বেশি শক্তিশালী যে কোনো সংবাদ গোপন থাকে না। দেশের এরকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের সার্বিক মানুষের শান্তি স্থাপন ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা কারফিউ ঘোষণা করেছেন। কারফিউ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে আনন্দিত করেছে। কারফিউ জারি করার পর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়েছে।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ