নিজস্ব প্রতিবেদক : একসময় ‘পুলিশ’ শব্দটা শুনলে সাধারণ মানুষ তো বটেই অপরাধীরাও ভয়ে থাকত। সবার মাঝে একটা ভীতি কাজ করত। পুলিশের ভয়ে অপরাধীরা সদা সতর্ক থাকত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ভয়ভীতি আর নেই বললেই চলে। পুলিশের ভয় এখন কারো মাঝেই যেন নেই। উল্টো এখন পুলিশরাই ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তুচ্ছ কারণে মানুষ এখন পুলিশের উপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। হামলা করে বসছে পুলিশের উপর! অপরাধী ধরতে অভিযানে গেলে অপরাধীরা পুলিশের উপর গুলি চালাচ্ছেন। এমন অবস্থায় এলাকায় টহল, চেকিং, আসামি ধরতে অভিযানসহ বিভিন্ন রুটিন দায়িত্ব পালন করতেও তারা ভয় পাচ্ছেন!
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামে পুলিশের উপর একে একে ৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনায় পুলিশ রীতিমত শঙ্কিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপি পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা থানার এসআই, কনস্টেবলরা এখন রাতে টহল ডিউটিতে অনীহা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন মামলার তদন্ত কাজ বা আসামি গ্রেফতারে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতা-কর্মীদের হাতে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন।
১৪ জানুয়ারি বহদ্দারহাটে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তল্লাশি করতে গেলে ওই গাড়ির যাত্রীরাই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়।
৯ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সড়ক আইনে একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মামলা দেয়ার ঘটনায় থানার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সিএনজি অটো টেম্পোচালকেরা।
১৫ ফেব্রুয়ারি চান্দগাঁও সড়কে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদে গেলে দায়িত্বরত দুই পুলিশের উপর হামলা করে বসে চালকেরা।
২৫ ফেব্রুয়ারি বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় ছিনতাইকারীদের আস্তানায় অভিযান চালায় ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে দুই সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন।
২৭ ফেব্রুয়ারি হালিশহর বড়পোল মোড়ে ব্যাটারিরিকশার বিরুদ্ধে মামলা করায় চালকেরা মিলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে মারধর করে।
২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের চরপাড়া ঘাটের কাছে গাঁজাসেবনে বাধা দেওয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে পরিকল্পিত ‘মব’ তৈরির মাধ্যমে হামলা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ মাদকসেবীরা।
সর্বশেষ গতকাল ২ মার্চ গভীর রাতে কক্সবাজার পেকুয়ার ৮ নং ওয়ার্ড চরপাড়ায় চকবাজার থানার ওসি জাহেদুল কবিরের গ্রামের বাড়িতে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, একের পর এক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ নিরাপত্তাহীন বোধ করছে। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন করে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার ভয়েও অনেক পুলিশ সদস্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এসব কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, যা জনজীবনে উদ্বেগ তৈরি করছে।
পুলিশের প্রতি এমন আচরণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিএমপি পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা বেগম বলেন, পতেঙ্গার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রেও আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পুলিশ দায়িত্বের প্রতি সচেতন ও সতর্ক। কিছু ঘটনা ঘটছে। এগুলোতে মামলা হচ্ছে। দ্রুত ঘটনায় জড়িতদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ