চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেওয়া, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন চট্টগ্রামের তিনটি সংসদীয় আসনের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। পরাজিত এ তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নেতা। তারা পুনর্নির্বাচন ও প্রার্থিতা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
ভোটের পরদিন সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে করে এবং নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে এ দাবি জানানো হয়।
এই তিন প্রার্থী হলেন- চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের কেটলি প্রতীকের প্রার্থী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী।
এদের মধ্যে মীরসরাই আসনের গিয়াস উদ্দিন পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের বিজয় কুমার চৌধুরী ভোটে বিজয়ী আবদুচ ছালামের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি তুলেছেন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী অভিযোগ তুলেন কেন্দ্র দখল করে লাঙ্গল সমর্থকেরা প্রচুর পরিমাণ জাল ভোট দিয়েছেন।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম-১ আসনে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাবার প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে নৌকার প্রার্থী ভোটের দিন পুরো উপজেলায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। ৬০ থেকে ৭০টি কেন্দ্র থেকে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়।’
এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের ছেলে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন।
গিয়াস আরও উদ্দিন বলেন, ‘মিরসরাইয়ের জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে সিল মেরেছে। আমি সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৫২ হাজার ভোট পেয়েছি। যদি বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দিত, তাহলে ঈগল প্রতীকের জয় হতো।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঈগল প্রতীকের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
জানতে চাইলে মাহবুব উর রহমান বলেন, প্রথম থেকেই গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করে এসেছেন। ভোটের দিন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের অনেকে স্বেচ্ছায় চলে যান। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং অন্যরা তাদের থাকার অনুরোধ করেছিলেন। এখনো ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলেছেন, লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট ও সন্ত্রাসী বাহিনী যোগসাজশ করে ১৯টি কেন্দ্র থেকে কেটলি প্রতীকের এজেন্টদের সকালেই জোর করে বের করে দিয়েছে। কাউকে কাউকে মারধর করা হয়েছে। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আবার কোনো ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় কেন্দ্র দখল করে লাঙ্গল সমর্থকেরা প্রচুর পরিমাণ জাল ভোট দিয়েছেন। তাই কেন্দ্র দখল ও জালভোটের নির্বাচন বাতিল করে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
এ আসনে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য।
এদিকে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এনে ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান তিনি।
তাঁর বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে দাবি করে বিজয় কুমার বলেন, নির্বাচনের আগে পরপর দুই দিন এ আসনের পোপাদিয়া, সরোয়াতলী ও আমুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন।
বিজয় কুমার বলেন, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদের কাছ থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য কেনার টিসিবি কার্ড কেড়ে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাননি তিনি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ