কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের টেকনাফ পাহাড়ে অপহৃত তিন বনকর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে বনকর্মীদের সঙ্গে অপহরণকারীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় বনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ, স্থানীয় লোকজনও ছিল। পরে অপহরণকারীরা পালিয়ে গেলে অপহৃত তিন বনকর্মীকে উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় বনবিভাগের কর্মী, কমিউনিটি প্যাট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যরা ১০ রাউন্ড গুলি চালায় বলে স্বীকার করেছেন বনবিভাগের সদর ও মৌচনী বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম সরকার।
আবুল কালাম সরকার বলেন, যেকোন ভাবে আমরা অপহৃত তিন বনকর্মীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে তৎপর ছিলাম। পুলিশ, স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে তিনদিন ধরে পাহাড়ে আমাদের অভিযান চলমান ছিল। অবশেষে আমরা অপহরণকারীদের আস্তানায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং অপহরণকারীরা আমাদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরে অভিযান পরিচালনাকারী দল অপহরণকারীদের গুলি চালায়। এতেই তারা পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আমরা উদ্ধার হওয়া বনকর্মীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় তথ্য পেয়েছি অপহরণকারী দলের সঙ্গে ১৪ জন ছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র ছিল।
এদিকে অপহৃত বনকর্মীদের উদ্ধারের বিষয়ে রাত আটটায় টেকনাফ থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওসি মো. জোবাইর সৈয়দ বলেন, তিনজন বনকর্মীকে অপহরণ করার বিষয়টি জানার পর পুলিশের একাধিক টীম পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় বনকর্মী ও স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সহায়তা দিয়েছেন। বনকর্মীদের উদ্ধারের পর অব্যাহত অভিযানে একজন অপহরণকারী, দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,’পুলিশ পাহাড় থেকে অপহৃত তিন বনকর্মীকে উদ্ধার করেছে। তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছে কিনা সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। তবে উদ্ধার বনকর্মীদের শারিরিক-মানসিক পরীক্ষা শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী বিটের নেচার পার্ক বনে পাহারা দেওয়ার সময় অপহৃত হন ওই তিনজন বনকর্মী। তাদের মুক্তি দিতে পরিবারের কাছে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন অপহরণকারীরা। উদ্ধার হওয়া হওয়া বনকর্মী হলেন, হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মো. শাকের (২০) একই এলাকার বকসু মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান (৪২) ও আবদু শুক্কুরের ছেলে আবদুর রহিম (৪৬)।
টেকনাফের হ্নীলা ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তিনদিন পরে বনকর্মীদের পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও এর আগে পরিবারের কাছে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেছে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধারে পুলিশ ও বনকর্মীরা পাহাড়ে অভিযান শুরু করে।’
এ বিষয়ে বনবিভাগের কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) এক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অপহৃত তিন বনকর্মীকে উদ্ধারে মুক্তিপণ দিতে হয়নি এ বিষয়টি স্পষ্ট। আজকের (সোমবার) মধ্যে অপহৃতদের উদ্ধার সম্ভব না হলে আমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে চিন্তা করেছিলাম। আজ (সোমবার) বিকাল তিনটায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে দুপুরে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হওয়ায় এ পথে যেতে হয়নি আমাদের।
কেন মুক্তিপণ দিয়ে আনার চিন্তা জানতে চাইলে ওই কর্তা জানান, অপহরণকারীরা সবশেষ তিনজনকে মুক্তি দিতে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল। সোমবারের মধ্যে মুক্তিপণ না দিলে বনকর্মী মো. শাকেরের একটি হাত কেটে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল অপহরণকারীরা। মুলত বনকর্মীদের অক্ষত অবস্থায় ফিরে ফেতে এ ধরণের সিদ্ধান্তের নিতে চেয়েছিল বনবিভাগ।