পাহাড়জুড়ে শুরু হয়েছে বর্ষবরণ উৎসব 

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে বর্ষ বরণের নানা আয়োজন। প্রতিবছর চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় বর্ষবরণের আয়োজন যা শেষ হয় বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে। পাড়া-মহল্লা দূরদূরান্তের পাহাড়ি গ্রাম সব জায়গায় কোন না কোন আয়োজন থাকে বাংলা বর্ষবরণ নিয়ে।

আবার বর্ষ বরণের অনুষ্ঠানগুলো পার্বত্যাঞ্চলে এক এক জাতিগোষ্ঠী এক এক নামে পালন করে। যেমন—  বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-সাংক্রাই-চাংক্রান ইত্যাদি নামে। এইটি পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়ায় এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে শুধু রাঙামাটিতেই শতকোটি টাকার লেনদেনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।

বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালনে ফাল্গুনের শেষ থেকেই পার্বত্য জেলাগুলোতে শুরু হয় কমিটি গঠন থেকে শুরু করে নানা কার্যক্রম। আর চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় ঊৎসব, যার রেশ থাকে বৈশাখের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।

এই বছরটিও ভিন্ন নয় পার্বত্য জেলা রাঙামাটির চিত্র। ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে বিজু মেলা। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে মেলা চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলায় ১৮০টি স্টলে স্থান পেয়েছে নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর তৈরি পোষাক, বাদ্যযন্ত্র, খাবার, খেলনাসহ নানা ব্যবহার্য জিনিস। প্রতিদিন থাকছে নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি তুলে ধরতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চিত্রাংকন, বাহারি তরকারি দিয়ে পাঁজন রান্না প্রতিযোগীতাসহ নানা খেলাধুলা।
এছাড়াও রাঙামাটি মাঝের বস্তী শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ পাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশদিনব্যাপী বৈশাখি মেলা। সেখানে অর্ধশত স্টলে স্থান পেয়েছে বাহারি পণ্যের দোকান। শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইড। যা চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত।

অন্যদিকে ৯ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-সাংক্রাই-চাংক্রান-পাতা উদযাপন কমিটি রাঙামাটি। তাদের আয়োজনেও থাকছে বর্ণাঢ্য সাজে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ঐতিয্যবাহী খেলাধুলা।

আর বাংলা বর্ষবরণে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে ১২ এপ্রিল ফুল বিজু অথ্যাৎ কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানো ও ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর মধ্যে দিয়ে। ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন পালন করা হবে মূলবিজু নামে এইদিন শত পদের তরকারি দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাঁচন রান্না ও আতিথেয়তার মধ্যদিয়ে। আর পহেল বৈশাখ পালন করা হয় গজ্জাপজ্জা নামে। এর পরও নানা পাড়া মহল্লায় কনসার্টসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে আরো অনন্ত ১০-১৫দিন।

আর পার্বত্য এই জেলায় পুরো অনুষ্ঠান ঘিরে পর্যটন ব্যবসা, খাবার, পরিবহন, ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে নতুন পোশাকের বেচাবিক্রি হয় জেলার সর্বত্র। সারাবছর দোকানিরা অপেক্ষায় থাকেন এই উৎসব ঘিরে বিকিকিনির। রাঙামাটি চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিস এর তথ্যমতে এই উৎসবকে ঘিরে রাঙামাটিতে প্রায় শতকোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাঙামাটির মানুষ আরো ভালোভাবে উৎসব উৎযাপন করছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। পর্যটন স্পট থেকে শুরু করে শপিংমল মেলাগুলো সব জায়গায় মানুষের ঢল। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান রাঙামাটির মানুষের বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। এই উৎসব ঘিরে রাঙামাটিতে বিভিন্ন পণ্যের প্রচুর কেনাবেচা হয়। খাবার, পরিবহন, পর্যটন থেকে শুরু করে অসংখ্য খাত এই উৎসবের সাথে জরিত। যার কারণে প্রায় শতকোটি টাকা এই উৎসব ঘিরে লেনদেন হয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যবসা খাতে।

মাঝেরবস্তী বৈশাখি মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক রাজন রক্ষিত বলেন, আমরা দশদিনব্যাপী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বৈশাখি মেলার আয়োজন করেছি যা চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ১৫ এপ্রিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিয্যবাহী খাবারসহ নানা পণ্যের স্টল বসেছে।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, আমাদের সংস্কৃতি যত উন্নত হবে তত আমরা এগিয়ে যাবো। এই বিজু মেলার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে দেশসহ বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই।

রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অনুপ কুমার চাকমা বলেন, এই উৎসব পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে আমরা সকলের সুখ, শান্তি ও মঙ্গল কামনা করি।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top