নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘পাহাড়খেকো’ হিসেবেই পরিচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম (৫৫)। কিন্তু শুধুমাত্র পাহাড়কাটা নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল কর্মী ওয়াসিম আকরাম ও শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত হত্যাসহ মোট দেড় ডজন মামলার আসামি তিনি।
শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টায় পাঁচলাইশ থানা ও পুলিশ লাইন্সের বিশেষ টিমের যৌথ অভিযানে রাতে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে তাকে চট্টগ্রাম আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম জানান, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, জহুরুল আলম জসিম দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায়। এ তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) এর নেতৃত্বে সিএমপি পুলিশ লাইন্সের একটি স্পেশাল টিম ও পাঁচলাইশ থানার একটি আভিযানিক দল যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। ওই বাসা থেকে পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলাকারী চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জসিমকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে জসিমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর জামিন নিশ্চিত করতে সে নিজে ধরা দিয়েছেন। বিষয়টির নিশ্চিত করা না গেলেও আটক হওয়া তার স্ত্রীর নামে কোন মামলা ছিল না বলে জানা যায়। তবুও জসিমকে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল এটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছিল।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জহুরুল আলম জসিম এর বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বিস্ফোরক আইনে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদপত্র শিরোনাম করেছে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীকে ছাড়াতেই তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন—এমন প্রশ্নে নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, এটা হাস্যকর স্টেটমেন্ট। আমি নিজে সেখানে ছিলাম। তিনি আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।
উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা ও হত্যার পরিকল্পনা সহ বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার, সংঘবদ্ধ হামলা ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আছে জসিমের বিরুদ্ধে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় জহুরুল আলম জসিম সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা চালায়।
তিনি আরও জানান, ১৬ জুলাই ২০২৪ মুরাদপুরের এন মোহাম্মদ প্লাস্টিকের বিপরীতে জুমাইরা বিল্ডিং-এর সামনে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র, ককটেল, লাঠি-সোটা দিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়েছে। যে ঘটনায় নিহত তিনজন হলেন, ছাত্রদলকর্মী ওয়াসিম আকরাম, শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার মিস্ত্রী মোঃ ফারুক। এবং ৪০-৫০ জন সাধারণ ছাত্র গুরুতর আহত হন।
গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় পুলিশ।
চাটগাঁ নিউজ/তাফহীম/এমকেএন/এসএ