পানি কমেছে কক্সবাজারে, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

এখনও নিখোঁজ ৭০ জেলে

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারে কমেছে বৃষ্টি, নেমে গেছে পানি তবে রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন।  বৃষ্টিপাত কমায় কক্সবাজারের বাসিন্দাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও উদ্বেগ কাটেনি সেখানকার জেলেপাড়ায়। কারণ এখনও নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৭০ জন জেলে। এরমধ্যে ৫ জনের মরদেহ উপকূলে ভেসে এসেছে যার মধ্যে চারজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি ফিশিং ট্রলার এখনো ফিরে আসেনি। ফিশিং ট্রলারগুলোর অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ট্রলারগুলো উত্তাল সাগরে ডুবে গেছে।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকূলে ফিরেছে। উদ্ধার হয়েছে ৫ জনের মরদেহ। এসব ট্রলারে থাকা অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ট্রলারগুলো হলো – এমভি আঁখি, এমভি তাহসিন, এমভি বাবুল, এমভি নাছির এমভি হাসান, এমভি আবছার, এমভি সাবিত, এমভি মায়ের দোয়া, এমভি কায়সার, এমভি আব্দুল মালেক, এমভি সেলিম, এমভি নজির ও এমভি জনি। তারমধ্যে ৮টি ট্রলার কলাতলী ও উখিয়ার ইনানীর পাটোয়ারটেক পয়েন্টে ভেসে এসেছে। সেখান থেকে তিন শতাধিক জেলে জীবিত উদ্ধার হয়েছে।

এদিকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ সাগরের উপকূলে ভেসে এসেছে।  সৈকতের নাজিরার টেক, কলাতলী, পাটুয়ার টেক ও পেঁচারদ্বীপ পয়েন্টে এসব জেলের মরদেহ ভেসে আসে। ভেসে আসা জেলেদের মরদেহের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

তারা হলেন – চকরিয়ার রাজাখালী এলাকার মো. হোছাইন (৩২) , লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এলাকার মোহাম্মদ জালাল (৩৭), বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল এলাকার নুরুল আমিন (৪০) ও একই উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল করিম (৩৫) ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২১০ মিলিমিটার। ভারি বৃষ্টি  কমলেও হালকা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।

গতকাল শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা এবং মার্কেট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। শহরের প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে বাজার ঘাটা, বড় বাজার, মাছ বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী এলাকা থেকেও পানি নেমে গেছে। তবে শহরের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়াছড়াসহ ৮টি নিম্নাঞ্চল এখনও পানিবন্দি বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল মোটেল জোনে পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতংক তৈরি হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।

টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি টেকনাফ ও উখিয়ায় অন্তত ১০০ গ্রামের মানুষ। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছিল। প্লাবিত এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফে প্রায় এক হাজার তিন’শ জন মানুষকে ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ টন চাল। এছাড়া আরও ১৬০০ প্যাকেট বিস্কুট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

 

Scroll to Top