পাচার বিলিয়ন ডলার, এস আলমের দেশে আছে মাত্র ২২৫ কোটি!

সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ আদালতের

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক:  এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশে এস আলম গ্রুপ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে মাত্র ২০০ কোটি টাকার। আর ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে রয়েছে মাত্র ২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার পরিমাণের অর্থ। সম্পত্তি আর ব্যাংক মিলিয়ে ধরা যায়, এস আলম গ্রুপের দেশে রয়েছে মাত্র ২২৫ কোটি টাকা পরিমাণের মত অর্থসম্পদ! তবে কি আর করা? সরকার চাইলে তো আর পাচার হওয়া টাকা ফেরত পাচ্ছে না। কথায় আছে- “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।”

দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর আশায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিঙ্গাপুরে বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে আদালতে পৃথক দুটি আবেদন করে। দুদকের উপপরিচালক মো. আবু সাঈদ আদালতে এ আবেদন করেছিলেন।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ২০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ৮৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন পৃথক দুটি আদেশে এ নির্দেশনা দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি রেজাউল করিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, দুদকের পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।

এস আলম গ্রুপের অন্য যাদের সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা হলেন—এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম, ভাই মোহাম্মদ আবুদুল্লাহ হাসান, ওসমান গনি, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম মাহির ও আসাদুল আলম, ওসমানের স্ত্রী ফারজানা বেগম এবং এস আলমের ভাই আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহ ফেরদানা।

প্রথম আবেদনে দুদক কর্মকর্তা উল্লেখ করেন,  এস আলম,তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ১৯টি অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৩ টাকা জমা দিয়েছেন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৮টি অ্যাকাউন্টে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকা জমা দিয়েছেন। যে কোনো সময় অ্যাকাউন্ট থেকে সেই অর্থ স্থানান্তর বা পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সেসব অ্যাকাউন্ট যাতে তারা স্থানান্তর ও উত্তোলন করতে না পারেন, সে জন্য ওই সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

ওই কর্মকর্তা তার আরেকটি আবেদনে উল্লেখ করেন, এস আলম,তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা চট্টগ্রাম ও ঢাকার গুলশানে কয়েকটি ভবন ও প্লট নির্মাণ এবং ক্রয় করেছেন, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। এসব স্থাবর সম্পদ যাতে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করতে না পারেন, সে জন্য আদেশ প্রয়োজন।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর একই আদালত সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তার পরিবারের ১১ সদস্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৪ আগষ্ট ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে ‘এস আলম’স আলাদিন‘স ল্যাম্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে এস আলমের  বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারেরর বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের ৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৩ আগষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অনুসন্ধান শুরু করলেও বেশিদূর এগোতে পারেনি সংস্থাটি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে অনুসন্ধান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় দুদক। একই বছর ২৪ আগষ্ট  এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর স্টে অর্ডার জারি করে উচ্চ আদালত। তবে ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নিয়ে আবার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top