উজ্জ্বল দত্ত : পাউরুটি, বান বা সমজাতীয় পণ্যের মেয়াদ ৩-৪ দিন কিংবা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। তবে চট্টগ্রাম নগরীতে কতিপয় মানহীন বেকারি তাদের উৎপাদিত পাউরুটি বা সমজাতীয় পণ্যে একমাস পর্যন্ত মেয়াদ দিয়ে বাজারজাত করছে। আর দীর্ঘমেয়াদী নষ্ট প্রায় এসব পাউরুটি বা সমজাতীয় পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। ভোক্তা সমাজ শুধু প্রতারিত হচ্ছেন তা নয়, এতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিরও শিকার হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘ইস্ট বেকারি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের একমাস মেয়াদী পাউরুটি বাজারে পাওয়া গেলে তা ভোক্তা সমাজে সমালোচনা শুরু হয়। তারা মনে করছেন, ফ্রিজেও যদি রাখা হয় তাহলে একটি পাউরুটি সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভাল থাকতে পারে। এমন অবস্থায় ইস্ট বেকারি কিভাবে তাদের পাউরুটি বা সমজাতীয় পণ্যে একমাস মেয়াদ ব্যবহার করছে? প্রশাসনের মনিটরিং দুর্বলতার সুযোগে অসাধু কোম্পানিগুলো এমন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন নগরবাসীর।
অভিযোগ রয়েছে, ইস্ট বেকারির মত আরও অনেক বেকারি স্বল্প মেয়াদী পণ্যের মোড়কে দীর্ঘ মেয়াদী তারিখ বসিয়ে বাজারজাত করে থাকে। দীর্ঘদিন তাজা থাকার জন্য এসব পণ্য প্রস্তুতের সময় মেশানো হয় ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ। পরিবেশনেও মানা হয় না কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি। টিনের তৈরি ছোট আকৃতির ভ্যানে বোঝাই করে দোকানে দোকানে সরবরাহ করা হয়। এসব মানহীন নষ্টপ্রায় বেকারি পণ্যের দোকানদাররা অতি মুনাফার আশায় এসব পণ্য কিনে থাকে। আর এগুলো খেয়ে ভোক্তারা নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন খতিবের হাট এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকুল অভিযোগ করে বলেন, ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য আমি দীর্ঘদিন এ পাউরুটি কিনে খেয়েছি। গতকাল পাউরুটি কিনে বাসায় নেয়ার পর দেখি পাউরুটিতে ছত্রাক এসে গেছে। পরে প্যাকেট চেক করে দেখি, এ পাউরুটি উৎপাদনের তারিখ দেয়া আছে ২৮ মে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেয়া আছে ২৮ জুন। মানে মেয়াদ আরও চারদিন আছে। কিন্তু আমার এক সহকর্মীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি জানান, এক সপ্তাহের উপরে কোন পাউরুটির মেয়াদ থাকে না। পরে দোকানে গিয়ে আমি ভালো ব্র্যান্ডের একটি পাউরুটি চেক করি। সেখানে দেখি মেয়াদ দেয়া মাত্র ৪ দিন। তখন আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের কোন লাইসেন্স নেই। বিএসটিআই’র অনুমোদনও নেই। অবৈধভাবে এরা ব্যবসা করে যাচ্ছে। এসব মনিটরিংয়ের জন্য নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর আছে, বিএসটিআই আছে, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। সর্বোপরি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে এরা মানহীন পণ্য বাজারজাত করছে। ভোক্তা সমাজ প্রতারিত হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দীর্ঘমেয়াদী এসব নষ্টপ্রায় পাউরুটি বা সমজাতীয় পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে পুষ্টিবিদ এমপিএইচ (ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন) ইমরুল হাসান সজল বলেন, পাউরু বা যেকোন খাবারে ছত্রাক এসে গেলে তা খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। খাবারের মধ্যে সৃষ্ট ছত্রাক মাইকোটক্সিন নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক উৎপাদন করে। এসব মাইকোটক্সিন শরীরে গেলে আপনি তৎক্ষণাৎ কিছু টের পাবেন না হয়তো। কিন্তু অসাবধানতাবশত যদি মাঝে মাঝে ছত্রাকযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন তবে লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে করে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ভেজাল মানহীন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে ভোক্তা সাধারণকেও সচেতন হতে হবে। অবৈধ বা অনৈতিক কিছু দেখলে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রতিনিধিদেরকে অবগত করে তথ্য সহযোগিতা করতে পারেন তারা।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ