কাপ্তাই প্রতিনিধি: দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত, উঁচু নীচু পাহাড়,পাখির কলতান, ছোট – বড় অনেক গাছ গাছালি, পাহাড়ি মাচাং ঘর, মারমা সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা এক কথায় প্রকৃতি দেবী তাঁর আপন মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন সীতা পাহাড়কে।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ২ নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ১ নং ওয়ার্ডের সুউচ্চ পাহাড়ের উপরে মারমা অধ্যুষিত একটি গ্রাম সীতা পাহাড়। যেখানে ৫৫ টি মারমা পরিবারের বসবাস।
সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৩ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত এই গ্রামের পড়তে পড়তে লুকিয়ে আছে অপার সৌন্দর্য। এই পাড়ায় উপর হতে যেদিকে চোখ রাখবেন সেদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য অবকোলন করা যায়। পাড়ার উপরে দাঁড়ালে একদিকে কর্ণফুলি নদীর স্বচ্ছ জলরাশি দেখতে পাওয়া যায় আর অন্যদিকে দাঁড়ালে কাপ্তাই লেক, চিৎমরম , কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া সীতা পাহাড় এর উপর হতে একদিকে রাঙ্গুনিয়ার শস্য ভান্ডার গোমাই বিলের অপরুপ দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। সীতা পাহাড় পাড়ায় বড় বড় বট গাছের তলায় বসে ক্লান্ত পথিক ক্ষানিকটা মনকে শীতল করতে পারে।
চন্দ্রঘোনা মিশন ঘাট বা কর্ণফুলি পেপার মিলস( কেপিএম) এলাকার ইঞ্জিনিয়ার ঘাট হয়ে কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে ডলুছড়ি গ্রাম পার করে অনেক খাড়া পাহাড় বেয়ে এই গ্রামে পৌঁছাতে হয়। পথে মধ্যে রাস্তার দু’পাশে সবুজ ঘন বন হতে নানা রকম পাখির কলতান মনকে কল্পনা জগতে নিয়ে যাবে। এই যেন একটি গ্রাম নয়, একটি স্বর্গ রাজ্য।
রবিবার ( ৩০ জুলাই) সীতা পাহাড় এলাকায় পাড়া কেন্দ্র পরিদর্শন এবং কমিউনিটি ট্যুরিজম নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করতে সেই এলাকায় যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে।
এসময় তিনি এই প্রতিবেদক জানান, বাংলাদেশে প্রকৃতির যে অপুর্ব লীলাভূমি, তাঁর একটি উদাহরণ হলো এই সীতা পাহাড়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের যেই স্বপ্ন দেখেছেন তাঁরই সফল বাস্তবায়ন করা যায় এখানে। এই সীতা পাহাড়ে অবকাঠামোগত নির্মাণ করে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলে এইখানকার মানুষের জীবনমান উন্নতি করা যায়।
সীতা পাহাড়ে প্রকল্প পরিদর্শন করতে আসা কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, কমিউনিটি ট্যুরিজমের অন্যতম স্থান হলো সীতা পাহাড়। যদি এইখানের আসার সময় রাস্তার পথটুকু মেরামত করা হয় তাহলে, যারা পাহাড় পছন্দ করেন তারা পাহাড় ট্রেকিং করে এখানে আসতে পারবে।
কাপ্তাই সীতা পাহাড়ে বেড়াতে আসা কাপ্তাই উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপু চন্দ্র দাশ ও উপজেলা সহকারী তথ্য অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়ন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। সীতা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমকে উন্নত করা যায়।
২ নং রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: সেলিম জানান, আমার ওয়ার্ডের সীতা পাহাড় এলাকাটি খুবই সুন্দর, এই সীতা পাহাড় কাপ্তাই উপজেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এখানে যদি পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করা যায়, তাহলে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
সীতা পাহাড় এলাকায় অধিবাসী থোয়াইচাই মারমা, পাইচিং মং মারমা ও কংসুইপ্রু মারমা জানান, এই পাড়া দেখতে খুব সুন্দর। এখানে আসার পথ যদি সংস্থার করা হয় এবং এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হলে আমাদের স্থানীয় জনগণ উপকৃত হবে।