চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানি টিপু (৫৫) হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে খুলনায়।পরবর্তীতে চুড়ান্ত পরিকল্পনা হয় ঢাকায়। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রলোভন দেখিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে গিয়ে তাকে শুটার দিয়ে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাব।
খুলনা সিটির সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানি টিপু হত্যাকাণ্ডে জায়গা জমি, প্রভাব-জনপ্রিয়তা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিহিংসাজনিত শত্রুতাকে কারণ বলে পরিবারের সন্দেহ।তবে এর পেছনে রাজনৈতিক ক্ষোভও আরেকটি কারণ হতে পারে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নিহত সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার গণমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, আমার স্বামীকে গাজী কামরুল (সাবেক চরমপন্থী দল নেতা) প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতেন। আমার স্বামীকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামীর এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি মানুষের বিচার সালিশ করতেন। এসব কাজ ভালো চোখে দেখতেন না এক সময়ের শীর্ষ চরমপন্থী দলনেতা গাজী কামরুল। তিনিই (গাজী কামরুল) আমার স্বামীকে হত্যা করেছেন। আমার সাথে তার শেষ কথা হয় বুধবার মাগরিবের নামাজের পর।
সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানি টিপু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহতের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক গোলাম রসুল বাদশা বলেন, খুলনা সিটির ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারসহ কয়েকজন মিলে প্রলোভন দেখিয়ে টিপুকে কক্সবাজার নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে শুটার দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়। যদি এটা পরিকল্পিত না হয়, তাহলে কিলার কীভাবে বুঝল যে আমার ভাই বাইরে বের হবে?
তিনি আরও বলেন, টিপু ঢাকায় থাকাকালে অনেকে তাকে ফোন করে বিভিন্ন প্রলোভন দিত। আমার ধারণা তাকে হত্যার আগে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে। অনেকগুলো গ্রুপ এক হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল এবং তারাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
তবে পরিবারের সন্দেহকে টিপু হত্যাকাণ্ডের ক্লু ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত চালালেও স্থানীয় পর্যায়ের তথ্যকেও আমলে রেখেছে তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম রাব্বানী এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন।তার সঙ্গে সবসময় লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দৌলতপুরের এক বাসিন্দা বলেন, সাবেক কাউন্সিলর টিপুর জীবনযাপন স্বাভাবিক ছিল না। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সবসময় তিনি গানম্যান নিয়ে ঘুরতেন। কাউন্সিলর থাকাকালে বিভিন্ন লোকের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) গোলাম রাব্বানি টিপু ও খুলনা সিটির আরেক সাবেক কাউন্সিলর (গ্রেফতার) আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসান ইফতেখার সালু ঢাকা থেকে কক্সবাজার যান। কক্সবাজারে টিপুর মাছের ব্যবসা ছিল। একসময় কক্সবাজার থেকে লবণের ব্যবসাও করতেন তিনি। ব্যবসায়িক কাজে প্রায় সময় টিপু কক্সবাজারে যাতায়াত করতেন। বুধবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে টিপু, শেখ ইফতেখার ও এক নারী গোল্ডেন হিল হোটেলে উঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় গোলাম রাব্বানি টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে গোলাম রাব্বানী টিপু হোটেল সীগালের সামনে ঝাউবাগানের ভেতরে কাঠের তৈরি সেতুর পাশে হাঁটছিলেন। এসময় মোটরসাইকেল করে এসে দুই দুর্বৃত্ত টিপুর মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কেসিসি’র সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু, শেখ ইফতেখার গতকাল সকালে কক্সবাজারে আসেন। তাঁরা সকাল ৭টার দিকে হোটেল গোল্ডেন হিলে ওঠেন। হোটেলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’-এ দেখা গেছে, আটক ইফতেখার নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সঙ্গে রুমি (২৭) নামে এক নারীও ছিলেন। ওই নারী পলাতক রয়েছেন।
এদিকে, খুলনা সিটির সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু নিহতের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাব।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে সালু (৫৩)। তাঁকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল সী হিল থেকে আটক করে র্যাব।ভোররাতে র্যাব কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মেজবাহ হক ভুট্টোকে আটক করে।
রাব্বানি টিপু হত্যায় শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নিহতের ভগ্নিপতি ইউনুস আলী মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান।
তিনি জানান, খুলনার সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গোলাম রব্বানী টিপুরা তিন ভাই, এক বোন। টিপু মেজো। বড় ভাই স্কুল শিক্ষক ও ছোট ভাই পারিবারিক গাড়ির ব্যবসা দেখাশোনা করেন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা বেঁচে নেই।
ছাত্রজীবনে খুলনা বিএল কলেজে ছাত্র মৈত্রীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু। তিনি কক্সবাজারে লবণ ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন খুলনা অঞ্চলে জমির ব্যবসা করেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সপ্তম শ্রেণি ও মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ