নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘টক অব দ্য টপিক’ আনসার-শিরিনের পরকীয়া ও ধর্ষণের গল্প এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে-মুখে, ফোনে-ফোনে। চাটগাঁ নিউজে “বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ- উপদেষ্টার কাছে ‘রেল কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রকাশ্যে আসে তার কুকীর্তি। এর পর থেকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন রেলওয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর (টিসি) আনসার আলী। নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন ভুক্তভোগী নারীকে। এমনকী অর্থের প্রলোভন দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ডেপুটি ডিরেক্টর (টিসি) আনসার আলীর হয়ে ঘটনার ধামাচাপা দিতে ভুক্তভোগী নারীসহ রেলের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন ঢাকা ডিএমও অফিসের প্রধান সহকারী জাকির হাসান। এ বিষয়ে প্রতিবেদকের হাতে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
সূত্র বলছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফওজুল করিম খানের ভাগিনার মাধ্যমে ফতুল্লাহ স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলামকে চট্টগ্রাম স্টেশনে বদলীর অফার করেও সুবিধা করতে পারনেনি জাকির হাসান।
প্রলোভনের এক পর্যায়ে শফিকুল ইসলামকে জাকির হাসান বলেন, ‘সব বাদ দেন, শত হলেও আমার এক সময়ের ডিসিও ছিলেন, উনাকে মাফ করে দেন। নিউজটা যেন ফ্লাস না হয়, সে ব্যবস্থা করেন। টাকা আমি দিবো।’
তবে এই ব্যাপারে জানতে ডিএমও অফিসের প্রধান সহকারী জাকির হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়ে বলেন, ‘কোন রেল কর্মকর্তা? এই ব্যাপারে আমি অবগত নই।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারী (টিএলআর) শিরিন আক্তারকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবাধে মেলামেশা করেন মো. আনসার আলী। পরে শিরিন আক্তার বিয়ের কথা তুললেই বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এই কর্মকর্তা। তাই নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন শিরিন আক্তার। এরই প্রক্ষিতে রেল উপদেষ্টার নির্দেশে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে শুনানির পর এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিরিন আক্তার বলেন, ‘আনসার আমাকে বিয়ে করবে বলে ধর্ষণ করেছে। এখন আমি স্ত্রীর মর্যাদার চাই। রেল প্রশাসনের কাছে আমি বিচার প্রার্থী।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আনসার আলী যদি আমায় বিয়ে না করে তবে মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোন পথ খোলা থাকবে না!’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, এমন পরিস্থিতি রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। বর্তমানে আমরা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। এমন পরিস্থিতি রেলওয়েতে কর্মরত নারী কর্মীদের মনে সংশয় ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় একজন কর্মচারীর নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হল ‘গুরুদণ্ড অপরাধ’। এই অপরাধের দায়ে একজন কর্মকর্তার শাস্তি হল বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি হতে অব্যাহতি, চাকরি হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার।
জানা যায়, রেলওয়েতে এ ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও বহুবার ঘটেছে। তবে দোষী কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও আইনগত শাস্তি না হওয়ায় অন্যরাও এসব অপকর্মে লিপ্ত হতে সাহস পাচ্ছেন।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ