চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুকে খুনের জন্য জামাতা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে দায়ী করেছেন শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফ। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর সঙ্গে বাবুলের বিয়েবর্হিভূত সম্পর্ক মিতু দেখে ফেলায় তাকে মানসিক অত্যাচার এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলায় মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন শাহেদা মোশাররফ। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় শাহেদা মোশারফকে কাঁদতে দেখা যায়। আসামি বাবুলের সামনেই সাক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। শাশুড়ি বিস্ফোরক বিভিন্ন তথ্যের বিপরীতে একেবারে নীরব ছিলেন বাবুল।
এর আগে সাক্ষ্য দেন বাবুল আক্তারের শ্বশুড় অবসরে যাওয়া পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন মাহমুদ, যিনি ঘটনার সময় নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে ছিলেন।
শাহেদা মোশাররফ বলেন, আমার বড় মেয়ে মাহমুদ খানম মিতুর সঙ্গে ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল আক্তারের বিয়ে হয়। তখন বাবুল আক্তার বেকার ছিল। বিয়ের পর একেবারে শুরু থেকে তাদের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না, মোটামুটি ছিল। পরে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর কক্সবাজারে এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) হিসেবে বদলি হয়। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। একদিন বাবুল আক্তার মিতুকে নিয়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওঠে। পাশের রুমে ওই নারীও ওঠে। ওই নারীর রুমে বাবুল আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় মিতু দেখে ফেলে। তখন মিতু তাকে জিজ্ঞেস করে, সে এখানে কী করছে? বাবুল মিতুকে বলে বিদেশে যাবার জন্য ল্যাপটপে কাজ করছে। তাদের দুজনকে এ অবস্থায় দেখে মিতুর খুব খারাপ লাগলো। সে কিছুক্ষণ ওখানে ছিল। বাচ্চারা একা থাকায় মিতু তাদের রুমে চলে আসে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সেও ঘুমিয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বাবুল ২০১৪ সালে মিশনে যায়। মিশনে যাওয়ার সময় তার একটি মোবাইল বাসায় রেখে যায়। ওই মোবাইলে বাবুল আক্তারকে দেওয়া ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর মেসেজ খুঁজে পায় মিতু। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে ওই নারীর উপহার দেওয়া দুটি ইংরেজি বই পায় মিতু। মিতু মেসেজগুলো দুটি বড় পৃষ্ঠা ও দুটি ছোট পৃষ্ঠায় লিখে রাখে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমার ছোট মেয়ের বাসায় মিতু ও তার ছেলেমেয়েরা বেড়াতে যায়। মিতু তখন আমাকে পৃষ্ঠায় লেখা মেসেজগুলো দেয়। এসব কিছু আমাদের বলায় বাবুল মিতুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরপর মিতু তিন-চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
শাহেদা আরও বলেন, মিতু চট্টগ্রামের বাসা থেকে ঢাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৬ সালের জুনের ৪ তারিখ রাতে মিতু আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে, আম্মা মাহিরের স্কুল থেকে ম্যাসেজ এসেছে। আমাকে খুব ভোরে মাহিরকে নিয়ে স্কুলে চলে যেতে হবে। ৫ জুন সকালে মিতুর বাসার পাশ থেকে একজন নারী আমাকে ফোন দেন। এরপর অঝোরে কাঁদতে থাকেন শাহেদা।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহম্মেদ বলেন, মিতু হত্যা মামলায় মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ ৪৯ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। শাহেদা মোশাররফের জেরা বাকি রয়েছে।
গত বছরের ১৩ মার্চ বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। বাবুলের সঙ্গে অভিযোগপত্রভুক্ত অপর ছয় আসামিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। আসামিদের মধ্যে বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল ও খাইরুল শুরু থেকে পলাতক।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল যে পরিকল্পনা করেছেন, অন্য আসামিদের যে প্রস্তুত করেছেন, সেটাই আজকের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ