নিজস্ব প্রতিবেদক: পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার সৌন্দর্য রক্ষা ও এটিকে বিশ্বমানের সমুদ্রসৈকতে পরিণত করার লক্ষ্যে এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তিন সংস্থা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সৈকত এলাকার ব্যবসায়ী ও ট্যুরিষ্ট পুলিশকে সমন্বিত করা হয়েছে।
আগামী বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সমন্বিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ লক্ষ্যে আজ ১৫ জুন বিকালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, সিডিএ প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রতিনিধি দল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা সৈকতের ব্যবসায়ীবৃন্দ, স্থানীয় প্রতিনিধি ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা ও এটিকে বিশ্বমানের সমুদ্র সৈকতে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সৈকত এলাকায় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সারি সারি দোকানপাট, খাবারের অতিমূল্য, অপরিচ্ছন্নতাসহ বিদ্যমান নানা প্রতিকূলতা পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদুল আযহার আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সৈকত এলাকায় স্থাপিত অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয়। আমাদের এ অভিযান কারো পেটে লাথি মারার জন্য নয়। আমরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের একটি পর্যটন স্পটে পরিণত করতে চাই। এ সৈকত যদি বিশ্বমানের হয় তাহলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবেন। পর্যটক আসলে এখানে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার পাবে। আর নানা ভোগান্তি হয়রানির কারণে পতেঙ্গা সৈকতের পরিবেশ যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে কিছুই আর হবে না। তাই সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, জেলা প্রশাসন, সৈকতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও হাইওয়ে পুলিশকে সমন্বিত করে সৈকত উন্নতকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
এজন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে–
(১) উচ্ছেদ করা দোকানপাটগুলোর ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা আপাতত সৈকতের ৩ নং গেইটের (সিঁড়ি)র পর থেকে বসবে। তবে বীচে কেউ ছাতা বা টেবিল বসাতে পারবে না। কেউ ছাতা বা টেবিল বসালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(২) সৈকত এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করা হবে। এখানে অনেক পর্যটক ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসেন, তাই তাদের বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে।
(৩) সৈকত এলাকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় আগত পর্যটকদের উপর জোর জুলুম, হয়রানির অভিযোগ শোনা যায়। যেকোন মূল্যে এটি বন্ধ করতে হবে। পর্যটকরা ভোগান্তির শিকার হলে তারা আর এখানে আসবেন না। আর পর্যটক না এলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে।
(৪) সৈকতের ঘোড়ার রাইড সার্ভিসগুলো যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। এদেরকে নির্দিষ্ট স্থানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ফটোগ্রাফারদেরকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে।
(৫) পর্যটকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা খাবারের অতিমূল্য আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেক দোকানে খাবারের মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর ব্যবস্থা করা হবে। সৈকতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। মূল্য তালিকা টাঙ্গানো না হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(৬) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরকে সমন্বিত করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম চালু করা হবে।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, ভোগান্তি ও হয়রানিমুক্ত সৈকতে পরিণত করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট পুলিশকে সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ