চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : সাড়ে চার মাসের মাথায় ফের ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালক এবং কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।
আজ রোববার ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ও জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠন করা হলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যেই পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পদত্যাগ করেছিলেন। তাই নতুন করে পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এখন থেকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালক এবং কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।
এক নজরে খলিলুর রহমান
কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। শিল্পমালিকদের প্রতিষ্ঠিত চিটাগং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। বাংলাদেশ সিআর কয়েল ম্যানুফেকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) দুই মেয়াদে সহ-সভাপতি ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি যমুনা রিসোর্ট লিমিটেড, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার তিনি।
এদিকে, নবগঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের অন্য নতুন সদস্যরা হলেন- ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম (এফসিএমএ), ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল করিম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক।
আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, ড. রত্না দত্ত (এফসিএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
আগের পর্ষদের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদে আর কাউকে নতুন পর্ষদে রাখা হয়নি।
আর্থিক নানা অনিয়মের কারণে সংকটে পড়া সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ সাড়ে চার মাস আগে ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে মনোয়ারা সিকদার, রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও মুরশিদ কুলি খানকে বাদ দেওয়া হয়। কেবল সিকদার গ্রুপ থেকে পারভীন হক সিকদারকে পরিচালক রাখা হয়। তবে নতুন পর্ষদ থেকে তাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ সিকদার গ্রুপের বাইরে চলে গেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংককে (এনবিএল) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনই কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক। গত ২৭ এপ্রিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। এমন সিদ্ধান্তের মধ্যেই ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ