নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন পরিষদ গঠনের জন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামী ১৬ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠানের চুড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করে তপশীলও ঘোষণা করেছে কমিশন। তবে এ মুহূর্তে নির্বাচন চাইছে না চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির নেতৃত্বে সমিতি পরিচালিত হোক- এটাই চান।
তারা বলেছেন, আইনজীবী সমিতিতে দায়িত্ব পেয়ে বিগত কমিটিগুলো জামিন বাণিজ্য, চেম্বার বরাদ্দ ও সদস্যভুক্তিতে স্বজনপ্রীতি-অনিয়ম, সমিতির তহবিল যথেচ্ছাচারসহ নানা অনৈতিক কার্যকলাপে সমিতিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। বর্তমান এডহক কমিটি সে অচলায়তন ভেঙ্গে নতুন দিনের সূচনা করেছে। সমিতির তহবিল উদ্ধার, অপেশাদার আইনজীবীদের চিহ্নিত করে সদস্যপদ বাতিল, তাদের বরাদ্দকৃত চেম্বার বাতিলসহ নানা কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন। তাই সমিতি ও পেশাদার আইনজীবীদের স্বার্থে জাতীয়তাবাদী ফোরাম সমিতি এডহক কমিটিকেই দায়িত্বে রাখতে চান।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ অন্তর্বর্তী এডহক কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। গতকাল ৮ এপ্রিল কমিশনের দ্বিতীয় সভায় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় আগামী ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তারিখ দিয়ে তপশীল ঘোষণা করা হয়েছে। তপশীলে ১০ এপ্রিল কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয় (বার লাইব্রেরি) থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ১১ এপ্রিল একদিনের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই ও বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ এপ্রিল মনোনয়নপত্রের বৈধতা সংক্রান্ত আপত্তি শুনানী, সিদ্ধান্ত, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও প্রার্থীদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তপশীল অনুযায়ী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের বাকি আর মাত্র সাত দিন। এমন সময়ে এসে নির্বাচন বিমুখ চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আগামী একবছর পর্যন্ত সমিতির দায়িত্ব এডহক কমিটির হাতে থাকুক- তারা এমনটাই চাইছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রাম’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন পারভেজ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, এডহক কমিটি তো বিএনপি-জামাত মতাদর্শিক আইনজীবীদের। বর্তমান এডহক কমিটিতে জাতীয়তাবাদী আদর্শিক আইনজীবী রয়েছেন তিনজন। জামায়াত মতাদর্শী রয়েছেন দুইজন। এডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরী স্যার আমাদের। তাছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ লয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামসুল আলম। তারা দল মতের উর্ধ্বে উঠে সাধারণ আইনজীবীদের মন জয় করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, বিগত কমিটি যেখানে সমিতির ৪১ কোটি টাকার তহবিল থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মত বিভিন্ন দুর্বল ব্যাংকে নিয়ে গেছেন। এতে করে সমিতি এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। এডহক কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্বল ব্যাংকে রাখা এ টাকাগুলো কিভাবে ফেরত পাওয়া যায়, সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা আদালত এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ পার্কিং তুলে দিয়েছেন। অথচ এ পার্কিং ব্যবসা করে বিগত কমিটি টাকা কামিয়েছে। এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ বিষয় নয়। যারাই কমিটিতে ছিলেন-তারাই নানামুখী অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন।
বারকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন মন্তব্য করে।অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন পারভেজ আরও বলেন, চেম্বার নিয়ে পর্যন্ত তারা বাণিজ্য করেছেন। খাবারের দোকানগুলো পরিস্কারকরণ, লিফট মেরামত করেছেন। আমরা চাই এডহক কমিটি যেহেতু যুগান্তকারী কাজ করে যাচ্ছেন। এ কমিটি অন্তত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকুক ৮০ শতাংশসাধারণ আইনজীবী এমনটা চায়। এখানে দলের কোন বিষয় নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বারকে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংগঠনে পরিণত করার লক্ষ্যে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা প্রথমেই অপেশাদার আইনজীবীদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৪১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এখন নানামুখী সমস্যায় দুর্বল ব্যাংকে রাখা টাকাগুলো উত্তোলনই করা যাচ্ছে না। তবুও আমরা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রায় ১০ কোটি ১১ লাখ টাকার মত উত্তোলন করেছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সমিতিকে স্বাবলম্বী করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ