উজ্জ্বল দত্ত : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে দলীয় প্রার্থীতা অর্জনকারী নেতাদেরকে নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে দলটি।
জামায়াত ইসলামী সংশ্লিষ্ট রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দল হিসেবে জামায়াত বর্তমান পরিস্থিতিতে শক্ত অবস্থানে থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ের অবস্থান ততটা সুসংহত নয়। তাই তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি গতিশীল করা ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি-প্রচারণার উছিলায় তৃণমূলে সর্বধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টির রাজনৈতিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার সাথে বিএনপি-জামাতের যূথবদ্ধ অংশগ্রহণ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে দুটি দলে মতানৈক্য তৈরি হয়ে গেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নানা ইস্যুতে বিএনপির সাথে অনৈক্য তৈরি হয়েছে জামায়াতের। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকটি রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের তৈরি করে দিয়েছে। জামায়াত ইসলামীকেও আগামী নির্বাচনের নতুন রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা দিয়ে দিয়েছে। সেই রোডম্যাপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দলটি ইসলামী, সনাতনী ও অন্য ধর্মীয় সংগঠনকে সমন্বিত করে জোট তৈরির একটি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জামায়াত ইসলামি পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন-চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আনোয়ারুল সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ডা. আবু নাসের, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী–হালিশহর) অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদৎ হোসাইন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) শাহজাহান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জহিরুল ইসলাম।
জোট গঠনে পদক্ষেপ
২৮ জুন শনিবার ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী দল সংস্কার, বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। এ দলের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান অংশগ্রহণ করেছেন। এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর নতুন জোট গঠন পলিসির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
আবার ইসলামী আন্দোলনের ওই মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন সনাতন ধর্মীয় সংগঠন হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগঠন বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্র নামের একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগঠন। তাছাড়া সমাবেশটিতে সমমনা ইসলামী দল নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিও অংশগ্রহণ করেছে।
এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াতের ম্যাকানিজম অনেকটা স্পষ্ট ধরাই যায়। আর সেই ম্যাকানিজম হচ্ছে বিএনপিকে টেক্কা দিতে জামায়াতের সময়োপযোগী কৌশল। ইসলামী ও সনাতনী ধর্মীয়সহ অন্য ধর্মীয় সংগঠনকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রক্রিয়া দেশ জুড়েই শুরু করেছে দলটি।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না থাকার এ মুহূর্তে বিএনপিই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল এবং দেশ জুড়ে সংগঠনটির শিকড় প্রোথিত। বলা যায়, দেশ জুড়ে তাদের কর্মী ও সংগঠন রয়েছে। সে হিসেবে নির্বাচনী ইস্যুতেও বিএনপির একচ্ছত্র অবস্থান। এসব বিষয় বিবেচনায় জামায়াত নেতৃত্ব মনে করছে, দেশব্যাপী বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে হলে প্রতিটি জায়গাতেই দলের অবস্থান সুসংহত করার বিকল্প নেই। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলকে একই মঞ্চে আনার প্রক্রিয়াও বিএনপিকে টেক্কা দেয়ার একটি অংশ।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী বলেন, গত ১৭টি বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে জেল জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। কেন্দ্রের উপর থেকে নির্দেশনা মতে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ নানামুখী কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি ওয়ার্ড কমিটি গঠন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম চলছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় পরিচিতি পর্ব চলছে। নেতৃত্বের চেয়েও জনমানুষের সেবা করা আমাদের রাজনৈতিক মোটো।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া আসনের প্রার্থী নগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি শাহজাহান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কোতোয়ালি বাকলিয়া আসনের প্রার্থী আবু নাসের বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি মহল্লায় এখন দাড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার বইছে। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করছে, কারণ তারা জানে- জামায়াতই তাদের প্রকৃত বন্ধু। আমরা সুখ-দুঃখে সবসময় তাদের পাশে আছি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ