নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর)। এ উপলক্ষ্যে প্রতি বছর কবর জেয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পণ, খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন থাকলেও এবার ছিল না কোনো আয়োজন। এক প্রকার নিরবেই কেটে গেলো এবারে মৃত্যুবার্ষিকী। অথচ গত বছর কবরের পাশে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পর্যন্ত ছিল না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এবার শুন্যতা ভর করেছে বরেণ্য এই রাজনীতিকের কবরে। যেন মৃত্যুই সত্য, বাকি সব মিথ্যে!
এদিকে, প্রয়াত বাবু’র মৃত্যুবার্ষিকীতে কবর জেয়ারতে আসেনি তাঁর পুত্র সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, আরিফুজ্জামান চৌধুরী জিমিসহ পরিবারের স্বজনরা। বাবার মৃত্যুবার্ষিকী হলেও ভয়ে বিদেশ থেকে আসেনি কোনো সন্তান এমনটি গুঞ্জন আনোয়ারায়।
জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদেরকে কবর জেয়ারতে আসাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে বাধা কিংবা হুমকি কোনোটাই ছিল না। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকেও কোনো ধরণের বাধা ছিল না। তবুও সন্তানদের কেউ না আসায় এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নিজের পিতার আদর্শ ধারণ না করে বরং পিতার ইমেজকে বিক্রি করে খেয়েছেন বলেও মত দেন কেউ কেউ।
শুধুই কি সন্তান ও স্বজন? এবার কবরের আশপাশে দেখা যায়নি কোনো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও। অথচ গত বছর ২০২৩ সালের এদিনে নেতাকর্মীদের ছিল নানান আয়োজন। কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজের টোল বক্স থেকে শুরু করে হাইলধরস্থ কবরস্থান পর্যন্ত ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে থাকতো গোটা মাসব্যাপী। অথচ এ বছর উঠেনি কোনো ব্যানার-ফেস্টুন। কয়েকজন ছাড়া বাকী নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেই শ্রদ্ধার স্ট্যাটাস। ছিল না কোনো জেয়াফতের আয়োজন। জেয়ারত করারও যেন আগ্রহ জন্মেনি কারোরই।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের জন্য তার যে পরিমাণ অবদান ছিল তার ছিটেফোঁটাও ছিল না আনোয়ারার জন্য। তারা কেবল সম্পদই গড়লেন, এলাকার বেকার যুবকদের জন্য কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেননি। তার সন্তানও এমপি-মন্ত্রী হয়ে সমাজ, এলাকা ও দেশের জন্য তেমন কিছু করেনি।
কেবল রাজনীতি করে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি বানিয়েছেন। এছাড়া তিনি ক্ষমতাকালীন সময় দলের কর্মীদেরকে ব্যবহার করেছেন। আর দলের নেতাকর্মীরাও তাদেরকে খুশি করার জন্য বাবু মিয়ার কবরে লোক দেখানো শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমাতো। আজ স্বার্থ নেই তাই দুর্দিনে নেতাকর্মীরাও ফুল দিতে আসেনি।
দলের পদ বঞ্চিত নাম অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সুদিনের পাখিদের আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তৃণমূলদের মূল্যায়ন করলে হয়ত আজ এই অবস্থা হত না। বাবু মিয়া ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনের বটবৃক্ষ। কিন্তু তার সন্তানের ক্ষমতাকালীন সময়ে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেনি। হাইব্রিড ও টেন্ডারবাজদের নিয়ে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটিতে রাখা হয়। তারা নেতাকে খুশি করতে সুদিনে ফুল নিয়ে ভিড় জমাতো আজ তারা কেউ নেই। এই দায় পুরোটা নিতে হবে সাইফুজ্জামান জাবেদের।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর গণমানুষের নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ইন্তেকাল করেন। আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসী সুখ-দু:খের সাথী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কিংবা দুর্যোগ দুর্বিপাক-এলাকাবাসীর জন্য সবসময় ছায়া হিসাবে ছিলেন। নেতৃত্ব, জনপ্রিয়তা আর কর্মগুণে নিজের নামের চেয়ে বাবু মিয়া নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন এলাকাবাসীর কাছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ