মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা (উখিয়া) : কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে মডেল মসজিদ। অভিযোগ উঠেছে- গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এই স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমান সামগ্রী। এছাড়া কাজ শেষ না করেই অসম্পূর্ণ ভবনই নয়ছয় করে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর এন ইয়াকুব এন্টারপ্রাইজ। মুসল্লিদের দাবি- এ অনিয়মের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা! ফলে নির্মাণাধীন এই মসজিদটির স্থায়ীত্ব নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, মসজিদটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ধর্মীয় শিক্ষা ও কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও নির্মাণকাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেটি বুঝিয়ে দিতে শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মডেল মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে গাড়ি পার্কিং, ইমাম ট্রেনিং সেন্টার ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নামাজের কক্ষ থাকার কথা। দ্বিতীয় তলায় থাকবে প্রধান নামাজ কক্ষ ও কনফারেন্স রুম, তৃতীয় তলায় পুরুষ ও নারীদের পৃথক নামাজের স্থান, রিসার্চ সেন্টার, মক্তব ও ইসলামিক লাইব্রেরি এবং চতুর্থ তলায় থাকবে কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র, তাহফিজ সেন্টার, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমের কক্ষসহ অতিথি কক্ষ। এছাড়া সামনে থাকবে প্রধান গেট, জেনারেটর ও অতিরিক্ত অজুখানার ব্যবস্থা।
মুসল্লীদের দাবি— দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মার্বেল পাথর দেওয়ার কথা থাকলেও কেবল দ্বিতীয় তলায় মার্বেল বসানো হয়েছে। অপর দুটি তলায় মার্বেলের পরিবর্তে টাইলস বসানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, সামনের গেট, পুকুর সংস্কার ও অতিরিক্ত অজুখানা নির্মাণ না করেই কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
মরিচ্যা বাজার মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ইউসুফ আলী বলেন, মডেল মসজিদের কাজ মানসম্মতভাবে করা হচ্ছে না। আমরা চাই, সরকার যেভাবে পরিকল্পনা করেছে সেভাবেই যেন কাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদের সামনে একটি পুকুর আছে সেটি সংস্কার করছেন না। একই অভিযোগ করে স্থানীয় মুসল্লি মোহাম্মদ জহির বলেন, মসজিদটি এলাকার গর্ব, কিন্তু এখানে নিম্নমানের কাজ করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ জুন মসজিদের ঢালাই কাজে লোহার পাতের পরিবর্তে আম গাছের তক্তা ব্যবহার করায় নীচ তলার ৮টি গ্রেড বিম ধসে পড়ে। যা সেমসয় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এর পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মুসল্লিরা কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিছুদিন পর পুনরায় নতুন করে কাজ শুরু করে উক্ত ঠিকাদার।
প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইয়াকুব এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ পরিচালিত হলেও প্রকল্পটি দেখভাল করছেন দেলোয়ার হোসেন মিন্টু নামে একজন ঠিকাদার।
মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমার বাজেটের মধ্যে যা যা আছে তা দিয়েই কাজ করছি। অতিরিক্ত অজুখানা, গেট, ট্রান্সফরমার, পুকুর সংস্কার, মার্বেল ও জেনারেটরের বিষয়ে পরে দেখা যাবে। এরপর তিনি লাইনটি কেটে দেন।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনজুর আলম বলেন, কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। কিছু অংশে ঢালাই ও গাঁথুনি সঠিকভাবে হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। যতক্ষণ বলে ততক্ষণে ঠিকঠাক করলেও পরে তাদের মতো করে কাজ শেষ করতে তড়িঘড়ি করছে ঠিকাদার। মসজিদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, সামনের গেট, পুকুর সংস্কার ও অতিরিক্ত অজুখানা ও তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় মার্বেল বসিয়ে কাজগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, এই মসজিদের দায়িত্বে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ আছে। তবে আমি নিজেও মসজিদের কাজের খোঁজখবর রাখি। স্থানীয় মুসল্লিদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছি।
উখিয়া মডেল মসজিদের তদারকির দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার গণপূর্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান চাটগাঁ নিউজকে বলেন, মুখের কথায় সরকার কাজ করতে পারে না। মুসল্লিদের কোনো দাবি থাকলে লিখিতভাবে জানাতে হবে। জেনারেটর দেওয়ার কারণে বিভিন্ন মডেল মসজিদে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসছে সেজন্য জেনারেটর দেওয়া হচ্ছে না। পুকুর সংস্কারের বাজেট নেই। তবে ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে। বাজেট অনুযায়ী দ্বিতীয় তলায় মার্বেল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় টাইলস দেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ







