সিপ্লাস ডেস্ক: রাজধানীর ধোলাইখালে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীকে আট সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (২১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান। অন্যদিকে নিপুণ রায়ের পক্ষে শুনানি করেন তার বাবা অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় চৌধুরী।
এ মামলায় গত ১ আগস্ট নিপুণ রায়কে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর ধোলাইখালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন ৩০ জুলাই বিএনপির অন্তত ৪২৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাসির উদ্দিন হাওলাদার বাদী করা মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে নিপুণ রায় চৌধুরী ৬ নম্বর আসামি।
অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য সেদিন ধোলাইখালে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী সড়কে জড়ো হন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ২৪ নেতাকর্মীকে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় আরও ৩০০/৪০০ জনকে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২৯ জুলাই ধোলাইখাল গোয়ালঘাট নাসির উদ্দিন সর্দার লেনের মনসুর মার্কেটের সামনের রাস্তায় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন এবং যানচলাচলসহ সাধারণ জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে থাকেন।
এসময় পুলিশ বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায় চৌধুরী, নিপুণ রায় চৌধুরী ও ইশরাক হোসেনদের অনুমতিবিহীন অবস্থান কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে বারবার অনুরোধ করে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিপুণ রায় চৌধুরীর নির্দেশে এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামিসহ আশপাশ থেকে আসা অজ্ঞাতনামা অন্য আসামিরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা বিশৃঙ্খলাকারী আসামিরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেলসহ সঙ্গে নিয়ে আসা প্লাস্টিকের শক্ত পাইপ, কাঠের লাঠি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে আক্রমণ করেন।
একপর্যায়ে সূত্রাপুর থানায় কর্মরত এসআই মো. নাহিদুল ইসলামের ওপর প্লাস্টিকের শক্ত পাইপ, কাঠের লাঠি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করায় তার হেলমেট খুলে যায় এবং মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা উচ্ছৃঙ্খল আসামিরা বিভিন্ন দিক থেকে পুলিশের ওপর হিংস্র ও আক্রমণাত্মকভাবে চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ও একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকেন এবং আশপাশের দোকান ও বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে দোকান ও বাড়িঘরের ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ সরকারি সম্পত্তি, জানমাল রক্ষার্থে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যদের ইস্যুকৃত অস্ত্র শর্টগানের কার্তুজ ও গ্যাসশেল নিক্ষেপ করে।
এ মামলার গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেরাণীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মমিন, বিএনপির সক্রিয় কর্মী কবির, সোহাগ গাজী ও মো. রিয়াজ উদ্দিন রাজু।