নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ মহাষষ্ঠী। দেবীর বোধন। বোধন মানে জাগ্রত করা। আশ্বিন মাসের এই শারদীয় উৎসব দুর্গা দেবীর অকাল বোধন। প্রিয়তমা স্ত্রী সীতাকে লঙ্কাপতি রাবনের কাছ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করিয়েছিলেন রাম। প্রতিবারের মতো এবারের দুর্গোৎসব আয়োজকরা নানা শিল্প ভাবনা মাতৃ প্রতিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন। একেক মণ্ডপে দেবী দুর্গার একেক রূপ। মায়ের রূপে কোথাও ফুটে উঠেছে অসুর দমনের প্রতিবাদী রূপ। কোথাও মা দুর্গা আসন নিয়েছেন আনন্দময়ী লোকজ গৃৃহস্থ্য মাতৃরূপে। আবার কোন মন্ডপে মায়ের গড়নে দেখা গেছে গ্রীক শিল্প শৈলীর ছোঁয়া। কোথাও প্রতিমায় ভেসে উঠেছে কথাকলি, ভরত নট্যম নৃত্য ধারার মুদ্রা। কেউ কেউ আলোক বাতির রোশনাই আর ঝলকানিতে স্বতন্ত্র রূপে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন দেবী দুর্গার চিরন্তনী মাতৃরূপ।
নগরীতে অনুষ্ঠিত কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শনে ব্যতিক্রমী কয়েকটি মাতৃ প্রতিমা চোখে পড়েছে।
পাথরঘাটা পাঁচবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে শোক, শক্তি আর প্রতিবাদী মাতৃরূপে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। খালি হয়েছে জন্মধাত্রী মায়ের বুক। মায়ের সেই পুত্রশোককে শক্তিতে পরিণত করে অসুর বিনাশের মাধ্যমে গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ। এমন ভাবনা নিয়েই এবারের প্রতিমা তৈরি করেছেন পাথরঘাটা পাঁচ বাড়ি দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদ।
দক্ষিণ নালাপাড়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের দুর্গোৎসবে প্রতিবারের মতো এবারও ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। আয়োজক পক্ষ এবার মায়ের শ্বাশত চিরন্তন রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিমায়। এবারে প্রতিমার বিষয় হচ্ছে মাতৃ আরাধনা। এখানে মা দুর্গার গড়নে ফুটে উঠেছে চিরায়ত বাংলা মায়ের লোকজ শান্তিময় রূপ।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ নালাপাড়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পাল চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে প্রতিমা তৈরি করি না। একেক বছর একেক বিষয় ভাবনাকে পরিকল্পনায় রেখে আমরা মায়ের পূজা আয়োজন করি। এবছর মাতৃ আরাধনা বিষয় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
টেরিবাজার বাই লেইন পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিমা নির্মাণে অনন্য নির্মাণ শৈলী লক্ষ্য করা গেছে। গ্রীক শিল্প শৈলীর স্টাইলে নির্মাণ করা হয়েছে এই মন্ডপের দুর্গা প্রতিমা। আবার প্রতিমার সাইড লাইনে লোকজ বাংলার পটচিত্র শিল্প শৈলীতে অঙ্কিত হয়েছে আমাদের নিত্য সংসারী মা দুর্গার গৃহস্থ্য জীবনের নানান চিত্রকর্ম।
তবে প্রতিমা নির্মাণ ও সাজসজ্জায় নতুনত্ব রেখে এবারও আয়োজন করা হয়েছে হাজারীগলি পূজা উদযাপন পরিষদের দুর্গোৎসব। এখানকার প্রতিমায় ফুটে উঠেছে কথাকলি, ভরত নট্যম নৃত্যশিল্পের মৃদ্রা বিশেষ। আবার সাজসজ্জায় মৃদ্রিত হয়েছে দেবদেবীর বিভিন্ন সাংকেতিক রূপ। আলোকবাতির রোশনাই আর ঝলকানি তো রয়েছেই। হাজারীগলির পূজামণ্ডপে আলোক ও সাজসজ্জায় প্রতিবছরই নতুনত্ব রাখা হয়।
এদিকে, আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গা একতা গোষ্ঠী, কাট্টলী, পতেঙ্গা কাঠগড় কালীবাড়ি, জেএমসেন হল, রাজাপুর লেইনসহ নগরীর ১৬ থানায় স্বাড়ম্বরে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ঢাক-ঢোল আর কাসরের আগমনী বাদ্যের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠীর সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর জেএম সেন হল পূজামন্ডপ, কুসুমকুমারী স্কুল পূজামণ্ডপ, হাজারি গলি পূজামণ্ডপ ও নবগ্রহবাড়ি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।
তিনি নগরীর পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা এবং পূজা উদ্যাপনের বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন ও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন।
এ সময় সেখানে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুল ওয়ারীশসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ