চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট আসিম জাওয়াদের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে শুক্রবার বেলা বারোটার দিকে নামানো হয় মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়ামে। এর আগে সকাল থেকে পরিবারের সদস্য ও এলাকার বিপুল সংখ্যক বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ স্টেডিয়ামে অপেক্ষা করেন তার মরদেহ দেখার জন্য। ছেলের মরদেহ প্রথমে তার মা নিলুফা খানমকে দেখানো হয়। এ সময় মায়ের আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়াম। পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় নিহত পাইলটের দুই শিশু ও স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন নিলুফা খানম।
জুমার নামাজ শেষে বেলা ২টার দিকে শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়ামে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার হাজারো মানুষ অংশ নেন।
এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহরের সেওতা কবরস্থানে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সেখানে তার নানা মরহুম আব্দুর রব খানের কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত হন বিমান বাহিনীর চৌকস পাইলট আসিম।
নিহত আসিম জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ডা. মোহাম্মদ আমানউল্লার ছেলে। তার মায়ের নাম নিলুফা খানম। নিহত পাইলট আসিম মৃত্যুকালে স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা আইজা ও এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ আসিম জাওয়াদ জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।
চাকরিকালীন আসিম জাওয়াদ দেশ-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি পেশাদারি দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমানবাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্ডিয়ান এয়ার অর্জন করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট আসিম জাওয়াদ মারা যান। এর আগে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইয়াক-১৩০ নামের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পরই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এর পরপরই পতেঙ্গা এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হওযার আগেই বিমানে থাকা বৈমানিক উইং কমান্ডার সোহান ও বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ প্যারাস্যুট দিয়ে নদীতে নামলেও আহত হন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ