চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বহুল প্রত্যাশিত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পুরোনো অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির হাতে ক্রমাগত দৃশ্যত জিম্মিদশায় পতিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার (২৪ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, কর্তৃত্ববাদ পতনের পর থেকে দেশব্যাপী দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, মামলা–বাণিজ্য, গ্রেপ্তার–বাণিজ্য, জামিন–বাণিজ্য, ট্যাগ–বাণিজ্য ও দলীয় আধিপত্যকেন্দ্রিক সহিংসতা চলছে, যা নতুন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভীষ্টের জন্য অশনিসংকেত। মুখে সংস্কার অথচ কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় গণতান্ত্রিক ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার গণ–আকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে ‘আত্মজিজ্ঞাসা’ চর্চার তাগিদ দিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আত্মঘাতী রাজনৈতিক চর্চা পরিহার করে তাদের দায়িত্ব কর্তৃত্ববাদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহি, সততা ও নৈতিকতার কার্যক্রমের বিকাশের মাধ্যমে জনমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি, নৈতিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিচালন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তথা আপামর জনগণের হতাশা বাড়বে। নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এখনই দরকার রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক আত্মজিজ্ঞাসাভিত্তিক মৌলিক পরিবর্তনের পথ অনুসন্ধান এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পথ বের করা। অন্যথায় নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে পতিত কর্তৃত্ববাদের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে’-বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবি বলেছে, কর্তৃত্ববাদ পতনের পর থেকে দেশব্যাপী দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, মামলা–বাণিজ্য, গ্রেপ্তার–বাণিজ্য, জামিন–বাণিজ্য, ট্যাগ–বাণিজ্য ও দলীয় আধিপত্যকেন্দ্রিক সহিংসতা চলছে, যা নতুন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভীষ্টের জন্য অশনিসংকেত।
কর্তৃত্ববাদ পতনের পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা সবচেয়ে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত, তাদের নেতা–কর্মীদের একাংশের কার্যক্রম পতিত কর্তৃত্ববাদী আমলের সরকারি দলের বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থসিদ্ধিমূলক অসুস্থ চর্চার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই বিকশিত হচ্ছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষমতাপ্রত্যাশী ও প্রভাবশালী দলগুলোর নেতা–কর্মীদের একাংশের সরাসরি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগসাজশমূলক সম্পৃক্ততায় দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবারও স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে এই যোগসাজশে নির্বিকারভাবেই যুক্ত থাকছে পতিত রাজনৈতিক শক্তিও।’
মবতন্ত্রের বিস্তার নিয়ে টিআইবি বলেছে, দাবি আদায়ে বলপ্রয়োগের পাশাপাশি কোনো কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও বিচ্ছিন্নভাবে অতিক্ষমতায়িত শক্তির সম্পৃক্ততায় তথাকথিত ‘মবতন্ত্রের’ মুখোশে সংখ্যালঘু, জেন্ডারভিত্তিক, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বীভৎস আঘাত, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর নির্মম আক্রমণের অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে দেশবাসীকে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদিও সংশ্লিষ্ট দলসমূহের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাবধান করা থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাংগঠনিক পদক্ষেপও গৃহীত হচ্ছে, এসবের কার্যকর প্রতিকারে যেমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন বরাবরের মতো ব্যর্থতার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক ও সুরক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ ও সংশোধনমূলক কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি, নৈতিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিচালন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তথা আপামর জনগণের হতাশা বাড়বে। নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এখনই দরকার রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক আত্মজিজ্ঞাসাভিত্তিক মৌলিক পরিবর্তনের পথ অনুসন্ধান এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পথ বের করা। অন্যথায় নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে পতিত কর্তৃত্ববাদের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে।
টিআইবি বলেছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অনেকেই দখলদারি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত হয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত তার মাত্রা বাড়ছে। ‘এবার আমাদের পালা’—এই সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকার, বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার নজিরের পাশাপাশি অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত পুনরুজ্জীবিত করেছেন। পরিবহন টার্মিনাল, খনিজ সম্পদ, সেতু, বাজার ও জলমহাল দখল ও চাঁদাবাজির চক্রের পুনরুত্থানও রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীতের কর্তৃত্ববাদী শাসনের দুঃশাসনের ধারাবাহিকতাকে জিইয়ে রাখছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিচারিতার কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত নতুন রাজনৈতিক দলও সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদের নেতা–কর্মীর একাংশ চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে বিদ্যমান স্বার্থান্বেষী ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক চর্চাকেই রোল মডেল হিসেবে বরণ করে আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ