নিজস্ব প্রতিবেদক : বেশ কিছু দিন ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই সামাল দিতে পারছে না প্রশাসন। নানাভাবে চাঁদাবাজি ছাড়াও একের পর এক খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ ও অপমৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেই চলছে। চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে সাধারণ মানুষ।
পুলিশ ও অন্যান্য সূত্র মতে, ছয় মাসের ব্যবধানে নগরীতে অপরাধের হার বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় মোট ২ হাজার ৬৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি খুন, ৪২টি ডাকাতি, ১৬৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ২৩টি অপহরণ, ৩৪টি পুলিশের ওপর হামলা এবং ১৫৯টি চুরির মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মোট ১৬টি থানা। এ সকল থানায় প্রায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। তবে এত জনবল থাকার পরেও কেন দিন দিন বাড়ছে অপরাধের হার? এমন প্রশ্নই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পুলিশের ওপর হামলার মতো বিভিন্ন কারণে দিন দিন বাড়ছে অপরাধের হার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পুলিশের ভাষ্য মতে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টে নগরীর ১৬টি থানায় মামলা হয়েছে ২৪৬টি, সেপ্টেম্বরে ৩৮০টি, অক্টোবরে ৩৫৬টি, নভেম্বরে ৩৭৬টি, ডিসেম্বরে ৩৩৮টি এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৭১টি মামলা হয়েছে।
এছাড়াও গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিনতাই-ডাকাতি, অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪টি বেশি।
এদিকে নগরীর সাধারণ জনগণের দাবি, আগষ্ট পরবর্তী প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণেই নগরীতে একের পর এক অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে নগরীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, পত্রিকা খুললেই প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরি-ছিনতাই, খুন-ধর্ষণের সংবাদ চোখে পড়ে। যা প্রশাসনের দূর্বলতাকেই নির্দেশ করে। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় অপরাধীদের মন থেকে পুলিশের প্রতি ভয় উঠে গেছে। তারা এখন পুলিশকে আগের মতো ভয় পায় না।
নাইম আজাদ নামের একজন আইনজীবী বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এবং যারা অপরাধী তাদেরকে আইনের মাধ্যেম কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) রইস উদ্দিন বলেন, মানুষের ধৈর্য দিন দিন কমে যাচ্ছে। পারিবারিক-সামাজিক নানা ধরণের অবক্ষয় থেকে মানুষ অপরাধে লিপ্ত হয়। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমাধানের জন্য সমন্বিত নজরদারি এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর উপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ