নগর যুবদলের নতুন কমিটি চলতি বছরেই

পদপ্রত্যাশীদের দৌঁড়ঝাপ শুরু

উজ্জ্বল দত্ত : চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের খবর শোনা যাচ্ছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্র থেকে নগর যুবদলের নতুন কমিটি গঠন করে দেয়া হতে পারে বলে দলীয় নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে।

কমিটি গঠনের এমন সংবাদে নতুন নেতৃত্বে যেতে ইতোমধ্যে ছাত্রদলের সাবেক নেতৃত ও যুবদলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নগর বিএনপি’র অনেক নেতা রাজনৈতিক নানান কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। শুধু সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এমনটা নয়, অনেকেই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ-তদবিরও শুরু করেছেন।

নেতাকর্মীরা মনে করছেন— দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগী নিবেদিত নেতাকর্মী নেতৃত্বে আসলে তা দল ও দেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী যুবদল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শীঘ্রই উক্ত ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এমন ঘোষণায় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের নতুন কমিটিতে পদ পেতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংসহ সামাজিক-মানবিক নানামুখী রাজনৈতিক কর্মসুচি পালন করছেন পদপ্রত্যাশীরা।

সভাপতি পদে আগ্রহী উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গাজী সিরাজ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান।

সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চান বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম রাসেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ রাসেল, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সহসভাপতি মো. সিরাজ উদ্দিন।

কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল জানান— রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাদের পারফরমেন্স ভাল। যারা দলের জন্য কাজ করেছেন। নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সংগঠনের জন্য আত্ম নিয়োগ রয়েছে। তাদেরকেই মূল্যায়িত করা হবে।

এই বিষয়ে নগর যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী চাটগাঁ নিউজ’কে বলেন, যারা দলের দুঃসময়ে মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। দলের জন্য যাদের ত্যাগ তিতীক্ষা রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা সবসময় সক্রিয় ছিলেন। তারাই নেতৃত্বে আসা উচিত। পাশাপাশি যারা স্বচ্ছ, ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মী তাদের পদায়িত করা হলে সেটা দল ও সমাজের জন্য শুভফল বয়ে আনবে। আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলের সুস্থ, সুন্দর ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব অবদান রাখবে এমনটাই আশা রাখি।

যুবদলের নতুন কমিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নগর যুবদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাহেদ হোসেন চাটগাঁ নিউজ’কে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে দীর্ঘদিন শূণ্য কমিটি রাখার সুযোগ নেই। সাংগঠনিক এখতেয়ারও নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে দ্রুত সময়ের মধ্যেই নগর যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা দিতে পারে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেশের বিভিন্ন জেলায় নানামুখী কর্মসূচিতে ব্যস্ত। ৬৪ জেলা জুড়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নেতারা ঢাকা আসার পর এই ব্যাপারে কিছু হতে পারে।

চট্টগ্রাম নগর যুবদল সূত্রে জানা গেছে , চট্টগ্রাম নগর যুবদলের প্রথম কমিটি গঠন করা হয় ১৯৭৯ সালে। ঐ কমিটিতে একরামুল করিম সভাপতি ও কাজী আকবর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেই কমিটি দায়িত্ব পালন করে। ৬ বছর পর ১৯৮৫ সালে নগর যুবদলের কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটিতে সভাপতি পদে একরামুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হেদায়েতুল ইসলাম দায়িত্ব পান। এরপর নগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে সৈয়দ আজম উদ্দিন ও সদস্য সচিব হিসেবে কাজী বেলাল উদ্দিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আবুল হাশেম বক্কর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজী বেলাল উদ্দিন দায়িত্ব পালন করেন।

২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর কাজী বেলালকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তবে কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আপত্তির কারণে ওইদিন রাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কমিটি স্থগিতের নির্দেশ দেন।

কিছুদিনের মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ফলে কাজী বেলাল -মোশারফ হোসেন দিপ্তী পরিষদ ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১৮ সালের ১ জুন গঠিত নগর যুবদলের কমিটি সভাপতির স্থান পায় মোশারফ হোসেন দিপ্তী এবং সাধারণ সম্পাদক হয় মুহাম্মদ শাহেদ। এই পরিষদ ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকে।

পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রাসেল চাটগা নিউজ’কে বলেন, আমরা চাই যারা দলের জন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। দলের জন্য নিজের জীবনের সোনালী সময় নষ্ট করে দিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ আছে। তারা নেতৃত্ব পাক। এখন অনেক হাইব্রীডকে দেখা যাচ্ছে। হাইব্রীডরা যাতে দলে জায়গা না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কেন্দ্রকে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top