নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরের বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলো যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দকে ভরা এসব সড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি তীব্র যানজটে নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর কর্মঘন্টা। নগর সড়কের এমন বেহাল দশা আগে কখনো দেখেনি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সংস্কারের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়কের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে দাবি করলেও বিটুমিন সংকটের কারণে সংস্কার কাজ তালিকাতেই বন্দি হয়ে রয়েছে। আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কোথাও কোথাও ইটের টুকরা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করা হলেও তাতে দুর্ভোগ আরও বাড়ছে বলে অভিমত নগরবাসীর।
জানা গেছে, কোথাও বৃষ্টি, কোথাও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক। আবার কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে। তাছাড়া কয়েক মাস ধরে সড়ক মেরামত কাজে হাত দেয়নি চসিক। যে কারণে নগরের প্রতিটি সড়কে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও পিচঢালাইয়ের অস্থিত্বই নেই। দেখে মনে হয় গ্রামের কোনো কাচা রাস্তা।
চসিকের তথ্য মতে, ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে বেশ কিছুদিন ইষ্টার্ণ রিফাইনারীর প্ল্যান্ট স্থবির ছিল। রিফাইনারীতে বিটুমিন উৎপাদিত হয়নি। এতে করে সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত মিক্সার প্রস্তুতের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিটুমিন পায়নি চসিক। যার কারণে সঠিক সময়ে সড়কে কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। তবে সম্প্রতি প্ল্যান্ট চালু হলে ইষ্টার্ণ রিফাইনারী থেকে বিটুমিন সংগ্রহ করে সংস্কার বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে চসিক।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিটুমিন সংকটের কারণে কিছু দিন সড়ক সংস্কার করতে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে বিটুমিন সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক সংস্কার করা সম্ভব হবে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, বর্ষায় নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সংস্কার কাজ শুরুর জন্য ১১ জুলাই চসিক প্রকৌশল বিভাগ একটি তালিকা করে। চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তালিকায় নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে ৩২২টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় এক লাখ ২১ হাজার ৮১৪ বর্গমিটার (১০০ কিলোমিটার) রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট, বহদ্দারহাট থেকে ওয়াসা মোড়, টাইগার পাস থেকে নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী থানা মোড় থেকে আন্দরকিল্লা, আইস ফ্যাক্টরি রোড থেকে মাদার বাড়ি পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় এই সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর বাউয়া স্কুলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প কাজ চলছে। যা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। স্ট্র্যান্ড রোডের সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরো নাজুক। সড়ক তো নয় যেন শুধু জলাভূমি। প্রতিদিন এই সড়কটি ব্যবহার করছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ও নানা যানবাহন।
এস এস খালেদ রোডের জামালখান মোড় থেকে আশকারদিঘি হয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়, এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড় থেকে সিআরবিআর সাত রাস্তার মোড়, টেরীবাজার থেকে কোরবানিগঞ্জ, মাস্টারপুল, ময়দার মিল, বাকলিয়া হয়ে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়কটির অবস্থাও বেগতিক। মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত সড়কের মরি মরি অবস্থা।
নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ ৩ নং রুটের বাস চালক মো. শাহ আলম বলেন, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন রোডের অবস্থা একেবারে খারাপ। গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। প্রতিদিনই গাড়ির পার্টস নষ্ট হচ্ছে।
ঢাকা থেকে পণ্য পরিবহনে আসা ট্রাক চালক মুহিদুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে সদরঘাট স্ট্র্যান্ড রোডের অবস্থা নাজুক। চিটাগাংয়ে এরকম আর কোন রোড চোখে পড়েনি। আমি তো বিগত ৩/৪ বছর ধরে এই রোডের খারাপ অবস্থা দেখছি। কোন কাজই করা হয়নি।
পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আকতার হোসেন বলেন, সদরঘাট রোডের কোন মা-বাপ নেই। এই রোড সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর প্রায় ৮টি জেটিঘাট। দেশের পণ্য পরিবহনে এখানে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করে। তাছাড়া নানা ধরণের যানবাহন তো চলছেই। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কটির কোন মেরামত হচ্ছে না। শুনেছি সিটি কর্পোরেশন থেকে এটা করবে। কিন্তু শুধু শুনেই যাচ্ছি। কোন কাজ দেখতে পাচ্ছি না।
তবে সড়ক সংস্কার নিয়ে চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, তালিকা অনুযায়ী সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে সহসা। ইস্টার্ন রিফাইনারি খোলার পর ইতোমধ্যে ৪০ টন বিটুমিন সংগ্রহ করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে কাজ শুরু করব। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সংস্কার সম্পন্ন হবে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ