নগরজুড়ে পানির হাহাকার, ‘বৃষ্টিই একমাত্র সমাধান’ বলছে ওয়াসা

ইফতেকার নুর তিশন : রোজার শুরুতে এবার গরম পড়ায় পানির চাহিদাও বেড়ে গেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না। চাহিদার অপ্রতুল যেটুকু পানি দিচ্ছে তাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানি কখনও লবণাক্ত, কখনো দুর্গন্ধময়। বড় কষ্টে আছেন নগরের বাসিন্দা। কষ্টের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ গ্রাহক ওয়াসার এমডিকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার সিরু বাঙালী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওয়াসার পানি নিয়ে কষ্ট আছি। বাথরুমে যাওয়ার পানি পর্যন্ত মিলছে না। এমনটা চলতে থাকলে এলাকার ভুক্তভোগিদের নিয়ে ওয়াসার এমডি ও চীফ ইঞ্জিনিয়ারের বাসার লাইন খুলে নিবেন বলে হুমকি দেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের প্রায় সবখানেই রমজানের শুরু থেকে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন অনেক এলাকা আছে টানা ৩-৪ দিন পর্যন্ত পানি নেই ওয়াসার লাইনে। পয়ঃনিষ্কাশন, অজু, গোসলও ঠিকমতো করতে পারছেন না। কোথাও মাঝে মাঝে পানি পাওয়া গেলেও লবণাক্ত এবং দুর্গন্ধের কারণে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওয়াসা দিতে না পারলেও বিল আসে প্রতিমাসে। আর পানি পেলেও বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। -এমন অভিযোগ এসেছে বাসিন্দাদের কাছ থেকে।

গ্রাহকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলমের চাটগাঁ নিউজকে বলেন, কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়ায় ওয়াসার পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির আরেক উৎস হালদা নদীতেও কমেছে পানির প্রবাহ। হালদার উৎপত্তিস্থলের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য দেওয়া বাঁধের কারণে হালদায় পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হালদার পানিতেও বেড়েছে লবণাক্ততা।

তিনি বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে লেকের পানি কর্ণফুলীতে ছাড়া হয়। যে পাঁচটি ইউনিট দিয়ে পানি ছাড়া হয় তার মধ্যে চারটি বন্ধ। এ কারণে কর্ণফুলীতে মিঠাপানির সংকট তৈরি হয়েছে।

তবে অনেকে একেবারে পানি না পাওয়ার অভিযোগ করার বিষয়টি উনারা অবগত নয় বলে জানান। এই প্রতিবেদক তাৎক্ষণিক উনার সামনে বসেই ফোন দেন এক গ্রাহককে। ওই গ্রাহকের কথা শুনে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে কর্তব্যরত ব্যক্তিকে ফোন দেন ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী।

ওয়াসা জানায়, প্রতিদিন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সংকট ৭ থেকে ৮ কোটি লিটার। কর্ণফুলি নদী থেকে যেসব লাইনে পানি সরবরাহ করা হয় তাতে লবণ নেই। তবে যে সব এলাকায় কাপ্তাই লেকের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে সেখানে কিছুটা লবণাক্ততা রয়েছে। আর এসব সমাধান মিলবে শুধু মাত্র বৃষ্টি হলে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদুল আলম বলেন, কর্ণফুলী নদীতে পানি আসে কাপ্তাই লেক থেকে। কাপ্তাই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫টা টারবাইনের মধ্যে মাত্র একটি টারবাইন সচল থাকায় পানি কম আসছে। আবার অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর পানি সরবরাহের ওপর নির্ভর করে হালদা নদীর পানির লবনাক্ততা। কাপ্তাই লেকের পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা নদীতে প্রবেশ করলে হালদা নদীর লবণাক্ততা কমে। নয়তো সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে হালদাতে সমুদ্র থেকেই পানি আসে। এই মুহূর্তে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন যেহেতু একটা চলমান, ফলে পরিশোধন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি এখানে ডুকে যাচ্ছে। আর যে সময় সমুদ্রে লবনাক্ত পানির পরিমান বেশি চলে আসে তখন আমরা পানি উৎপাদন কমিয়ে দেই। মোট কথা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এলাকাভিত্তিক রেশনিং পদ্ধতিতে পানি দেওয়া শুরু করেছি।

ওয়াসার পানি পানে অ্যালার্জি, ডায়রিয়াজনিত বিভিন্ন রোগ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে এই প্রকৌশলী জানান, ডব্লিউএইচও’র যে নীতিমালা আছে, সেই অনুযায়ী যদি প্রতি লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম লবণাক্ততা থাকে তবে সেটা খাওয়ার উপযুক্ত। আমরা প্রতি লিটারে ২৫০ গ্রাম লবণাক্ততা উপযোগী পানিটুকুই গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top