উজ্জ্বল দত্ত : সাক্ষীর অনুপস্থিতি, আদালতের জনবল সংকট, অতিরিক্ত মামলার চাপ, ডিএনএ রিপোর্ট প্রদানে বিলম্বসহ নানা কারণে ধর্ষণের আলোচিত মামলাগুলোর বিচার কাজ এগোচ্ছে না। জামালখান এলাকায় শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হচ্ছে না। ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় আটকে আছে তদন্ত কাজ। হালিশহরে এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও হত্যায় গত সাত মাস ধরে সাক্ষী অনুপস্থিত। চন্দনপুরা এলাকায় মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক কর্তৃক বলাৎকারের মামলায় সাত জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হলেও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক ও তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য এখনো বাকি। চান্দগাঁও এলাকায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে গৃহশিক্ষক কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষণের মামলাটিতেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ভিকটিমকে বিয়ের শর্তে আসামিকে জামিন দেয়া হবে বলে আদেশ দিয়েছেন।
তবে পুলিশ প্রতিবেদন ও সাক্ষী জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ধর্ষণ মামলা ঝুলে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা। ফলে মামলায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শাস্তি হয় না প্রায় ৯৫ ভাগ আসামীর।
শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা
চট্টগ্রামের জামালখানের আলোচিত শিশু বর্ষা খুন ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। সাত বছরের শিশু কন্যা বর্ষাকে নরপশু লক্ষ্মণ সেন (৩০) ধর্ষণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নওশের কুরেশি বলেন, মামলার তদন্ত ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আটকে আছে। রিপোর্ট পেলে তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে।
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরের জামালখান এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু বর্ষা। তিনদিন পর ২৭ অক্টোবর জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনে নালা থেকে বস্তাভর্তি বর্ষার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
হালিশহরে কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা
চট্টগ্রামের হালিশহরে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে স্থবির হয়ে আছে। ২০২২ সালের মামলাটি বিচার কাজ এতদিন চললেও গত বছর ৯ জুলাই থেকে মামলার সাক্ষী অনুপস্থিত রয়েছেন। এ নিয়ে আদালতের কাছ থেকে বাদীপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাক্ষী হাজিরের ব্যাপারে কোন অগ্রগতি দেখাচ্ছে না তারা।
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬’র বেঞ্চ সহকারী জানান, সাক্ষীকে সাক্ষ্য দানের জন্য আদালতে আনার ব্যাপারে বাদী পক্ষের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে বাদীপক্ষ সাক্ষীকে আনতে পারছে না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারিও মামলার তারিখ ধার্য্য ছিল। আগামী ২৪ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা রয়েছে।
২০২২ সালের ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় হালিশহরের আব্বাসপাড়ার ভাড়া বাসার একটি কক্ষে ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরীকে আলমগীর জোরপূর্বক ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ থেকে আলমগীরকে গ্রেফতার করে র্যাব।
শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলাৎকার
২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চকবাজার চন্দনপুরা দারুল উম্মে মাদ্রাসায় মো. ইসমাইল নামে এক শিক্ষক ওই মাদ্রাসা পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই পর্যন্ত ১২ সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। বাকি ৫ সাক্ষীর মধ্যে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক ও তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য এখনো বাকি আছে বলে জানিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫’র বেঞ্চ সহকারী সৈয়দ আবীর আশফাক।
বাবাকে মারধরের ভয় দেখিয়ে গৃহশিক্ষক কর্তৃক তরুণী ধর্ষণ মামলা
চান্দগাঁও এলাকায় বাবাকে মারধরের ভয় দেখিয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার গৃহশিক্ষক আরিফুর রহমান বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর সকালে ভুক্তভোগী কিশোরীকে নগরের হালিশহরে ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আরিফুর রহমান ওই কিশোরীর সাথে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয় বলে আদালতকে জানায় ভুক্তভোগী। গত ৬ জানুয়ারি ওই কিশোরীকে হালিশহরের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আরিফুর রহমানকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলা করেন ভিকটিমের পিতা। গৃহশিক্ষক আরিফুর রহমানকে গ্রেফতার করে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ আসামিপক্ষ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত আপোষের শর্তে জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালত ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন মঞ্জুর করবেন বলে একটি আদেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুইয়া বলেন, এ মামলায় ভুক্তভোগী জবানবন্দী দিয়েছেন। ১৭ মার্চ আসামি আদালতে জামিন আবেদন করে। তবে আদালত বলেছেন, জামিন পেতে হলে আসামিকে ওই ভুক্তভোগী তরুণীকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের শর্তে আদালত জামিন দেবেন বলে আদেশ দিয়েছেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ