চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্যের (এমপি) সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েদি হিসেবে অন্যদের মতো নেতাদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে অন্য কোনো বিষয়ে আলাপ হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সামনে ফেনী-৩ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র এমপি রহিম উল্লাহ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক এমপি এম এ লতিফ। ছবিটিতে লতিফের পেছনে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাটহাজারী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম। ধর্ম উপদেষ্টার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি কারা পরিদর্শক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তাঁর পাশে ছিলেন কারা উপমহাপরিদর্শক টিপু সুলতান। ছবিটি শেয়ার করে সিরাজুল মাওলা মিলাদ নামে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘নতুন বন্দোবস্ত’। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মুখ বাঁকানো হাসির ইমোজি।
বেসরকারি কারা পরিদর্শক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, ধর্ম উপদেষ্টা কারাগারকে সংশোধানাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি শুরুতে মহিলা ওয়ার্ডে যান। ওই ওয়ার্ডের কয়েদিদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন তিনি। সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাঁটতে হাঁটতে অন্তত ৫০ জন কয়েদির সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের নানা সমস্যার কথা শোনেন। এর মধ্যে একটি ওয়ার্ডে সাবেক এমপিদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে অন্য কয়েদিদের মতো একইভাবে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘সাবেক এমপি লতিফের কোনো অভিযোগ ছিল না। নদভী জিনিসপত্রের দাম বেশি রাখা হয় বলে ধর্ম উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, পণ্যের প্যাকেটের মূল্যের চেয়ে বেশি রাখার সুযোগ নেই। সাবেক স্বতন্ত্র এমপি রহিম উল্লাহ তাঁকে ফেনী কারাগারে বদলির অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ধর্ম উপদেষ্টা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টা সরকারি সফরে কারাগারে এসে রান্নাঘরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শন করেন। কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি সেল ব্লকে যান। সেখানে সাবেক এমপিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আর দশ কয়েদির মতো কথা বলেছেন। কারাগারের ভেতরে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠকের কোনো সুযোগ নেই।’
চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শনের দিন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘কারাবন্দিদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে। কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তিনি অপরাধী নাও হতে পারেন। মিথ্যা মামলায়ও অনেকে আটক হন। সামাজিক কারণেও অনেকে মিথ্যা মামলায় আটক হন। যতক্ষণ আদালতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত না হয় এবং শাস্তি দেওয়া না হয়, ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যাবে না।’
গত বছরের ১৭ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ আমলের চারবারের এমপি এম এ লতিফ। তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। রহিম উল্লাহ সৌদি আরব আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফেনী-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছরের ১২ অক্টোবর তিনি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। ২০২১ সালে হেফাজত কর্মী রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম। তথ্যসূত্র: সমকাল
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন