চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।ডিম আমদানির অনুমতি, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিতরণে ৫৭ লাখ ফ্যামিলি কার্ডকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর, জ্বালানি তেলের দাম কমানো ও শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি। এছাড়া পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের চেষ্টাও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য নিয়ে এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি এ ভাষণ দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্যার ফলে অনেক জায়গায় ফসলহানি হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল। বন্যা পরবর্তী সময়ে বাজারে শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আপনাদের কষ্ট হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ানো জন্য আমরা সাড়ে ৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় শুল্কছাড়ও দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ডিমের উৎপাদকরা যেন সরাসরি বাজারে ডিম সরবরাহ করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, মানুষ যেন স্বল্প মূল্যে কৃষিপণ্য কিনতে পারে সে জন্য রাজধানীসহ বিভিন্ন স্পটে সরকারি কিছু পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বন্যার ফলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানিতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও দাম যাতে স্বাভাবিক থাকে এ জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে।
সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের কোনো লুকোছাপা নেই। মূল্যস্ফীতির পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি রোধে উচ্চ সুদের হার নির্ধারণসহ একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শস্য আমদানিতে এলসি সীমা অপসারণ এবং সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করাও রয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেন স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যাহত না হয় এবং রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি বাজারে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে এটা ভূমিকা রাখবে।
ভাষণে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সারতে হবে। এ ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, নির্বাচন কবে হবে এ প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সব দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হাল নাগাদসহ আরও কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে, যা একটি অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, তবে আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার আমাদের এ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদের এ ম্যান্ডেট দিয়েছেন।
ভাষণে সরকারের ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের গুম-খুনের বিচারের প্রত্যয় জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক বিভিন্ন তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ