চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই ছাত্র-সমন্বয়ক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার শাস্তি পেতে হবে।’
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গেল জুলাইয়ে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের সন্তানরা পাবে?’ তার এই বক্তব্যটি অবমাননাকর মনে করে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ছাত্র-জনতা। তারা বিক্ষোভ করে স্লোগান দেয়, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার। তুই রাজাকার আমি রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ এরপর আন্দোলনকারীদের দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগকেও মাঠে নামায় আওয়ামী লীগ সরকার। পুরো আন্দোলনটিই সংঘাতে রূপ নেয়, গুলিতে ও সংঘর্ষে প্রাণ যায় অন্তত ৩০০ জনের। শেষমেশ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, যারা সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। আওয়ামী লীগ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা কেন দেশ ছেড়ে পালালেন, সে বিষয়ে আমার কৌতূহল। ভারত এ দেশের মানুষের সঙ্গে নয়, শুধু হাসিনার সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছিল। তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় যেসব হত্যা বা খুন সংঘটিত হয়েছে, আমরা সেসব ঘটনার বিচার চাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তখন আমাদের দাবিদাওয়ার মধ্যে এটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ হাসিনা যদি ফিরে না আসেন, তবে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্যও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করতে চাই। এটি প্রচলিত আইনে সম্ভব নাকি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন, এর প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে অন্যদের সঙ্গে শপথ নিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো, আগামীতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করা। বিগত নির্বাচনগুলোতে কার্যকর বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছিল না। এছাড়া বিগত সরকারের আমলের দুর্নীতির ঘটনাগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করব।’
আপনি আগামীতে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিনা —রয়টার্সের এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে কী করব, সেটি দেশের মানুষের চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।’
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস