চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: তৌহিদি জনতা, ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নাম ব্যবহার করে দেশব্যাপী পীর-আউলিয়ার মাজারে হামলাসহ মব সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানিয়েছে সুন্নীয়তপন্থী সংগঠন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত’।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি হাটহাজারী উপজেলায় কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী ও আহলে সুন্নাতপন্থীদের সংঘাতের প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের অর্থ সচিব অ্যাডভোকেট মুখতার আহমদ ছিদ্দিকী। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফি, নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কাশেম নূরী ও মজলিসে শুরা সদস্য আবুল ফারাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
বক্তব্যে কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফি বলেন, পাঁচ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশব্যাপী পীর-আউলিয়ার মাজারে কথিত তৌহিদি জনতা, ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নাম ব্যবহার করে উগ্রবাদীদের ঘৃণ্য হামলা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুফিবাদী সুন্নী মুসলমানদের চরমভাবে আশাহত করেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক মাজারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু দোষীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইনে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এর ফলে দেশব্যাপী এ ধ্বংসযজ্ঞ আরও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজশাহীতে দরবার-খানকায় হামলা হয়েছে। রাজবাড়ীতে নুরু পাগলার মৃত্যুর প্রায় ২৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে দিন-দুপুরে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ চরমভাবে আশাহত হয়েছে। অথচ ইসলামী শরীয়তে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়ার অধিকার একমাত্র আগুনের স্রষ্টা মহান আল্লাহর (বুখারী শরীফ)। বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে কোনো কাফির-বেঈমানকেও আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়া নিষেধ করা হয়েছে।
কথিত তৌহিদি জনতার আলেম কিংবা ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এ ঘটনাগুলোর বিষয়ে কোনো বক্তব্য-মন্তব্য এবং কার্যকর পদক্ষেপ না আসা খুবই উদ্বেগের বিষয় – মন্তব্য করেন আশরাফি।
হাটহাজারীর সাম্প্রতি ঘটনা নিয়ে আহলে সুন্নাতের নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কাশেম নূরী বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুছের আয়োজন হয় চট্টগ্রামে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ নবীপ্রেমিক সুন্নী মুসলমান গাড়িবহর নিয়ে ভাবগম্ভীর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে এতে অংশ নেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এবার উত্তর চট্টগ্রাম থেকে আসা গাড়িগুলোতে জশনে জুলুছে অংশগ্রহণকারীদের উপর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করার মতো ঘটনা ঘটে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জশনে জুলুছে অংশগ্রহণকারীদের একজন আঙ্গুল প্রদর্শন করে। একে উপলক্ষ্য করে উক্ত হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা রাস্তায় বেরিয়ে অনেক যানবাহন ভাঙচুর করে। জুলুসের একদিন আগে তারা ওই মাদসার সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে তৈরি করা প্যাডে জশনে জুলুসে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের প্রতিরোধ করাসহ বিশৃঙ্খলা করা ঘোষণা দিয়েছিল। ঘোষণা অনুযায়ী তারা জুলুসের গাড়িগুলোতে হামলা চালায়। মাদরাসা থেকে গরম পানি নিক্ষেপ করে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কথিত তৌহিদি জনতা, ঈমান সংরক্ষণ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের নামে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মাজার ধ্বংস, মব সৃষ্টি করে আহলে সুন্নাত কর্মী ইমাম রইসউদ্দিন হত্যার বিচার দাবি করা হয়। এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সব মাজার পুননির্মাণসহ ধ্বংসযজ্ঞের সকল ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন, উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন