দেখে না চোখে, শুনেই পুরো কোরআন মুখস্ত করল দুই ভাই

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: শিক্ষকদের মুখ থেকে শুনেই পবিত্র কোরআন মাজিদের ৩০ পারার হাফেজ হয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ভাই। ওই দুই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

মাদ্রাসাশিক্ষকরা জানান, অল্প বয়সে বাবাকে হারানো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আল-আমিন (১৪) ও ফয়সালকে (১২) এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যান তাদের মা। মাদ্রাসায় অবস্থান করার পর শিক্ষকরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সহোদরের প্রতিভা বুঝতে পারেন।

মাদ্রাসা শিক্ষকরা জানান, পিতার মৃত্যুর পর গত পাঁচ বছর আগে আল-আমিন ও ফয়সালকে তাদের মা রূপবান বেগম ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যান। এরপর মাদ্রাসার ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক এই এতিম শিশুদের তার সন্তানের মতো আদর যত্ন করেন, শিক্ষাদান ও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তারা দুই জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও তাদের অসম্ভব মেধা দেখে হুজুর বিশেষভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালান এবং সফলতাও পেয়েছেন।

হাফেজ মাওলানা জাকির জানান, দুই এতিম ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ আল আমিন ও ফয়সাল পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হুজুরের মুখে শুনে মুখস্ত করেছেন। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারলেও পবিত্র কোরআন মাজিদের আলোয় আলোকিত তারা। তাদের সুরেলা কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত মুগ্ধ করেছে পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে। হাফেজ আল-আমিন গত বছর জাতীয় পর্যায় অন্ধ হাফেজদের কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এছাড়াও এই বছর ইসলামী ফাউন্ডেশনের জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতায় তারা দুই ভাই উপজেলা ও জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বিভাগীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে হাফেজ আল আমিন ও ফয়সালের মতো আরও প্রায় ১০০ জন এতিম শিক্ষার্থীসহ ৩০০ জন শিক্ষার্থী এই এতিমখানায় লেখাপড়া করছে। এ বছর ওই মাদ্রাসার আল-আমিন ও ফয়সালসহ ৪০ জন শিক্ষার্থী হাফেজ শেষ করায় তাদের পাগড়ি দেওয়া হয়।

মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক জানান, হাফেজ আল-আমিন ও ফয়সালকে মহান আল্লাহপাক বিশেষ রহমত ও মেধাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দেশের অন্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজদের জন্য প্রযুক্তি বা বিশেষ কৌঁশলে পড়াশোনা করলেও আমাদের এই দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পবিত্র কোরআন না দেখে হুজুরদের মুখে শুনে মহান আল্লাহপাকের ৩০ পারা কোরআন শরীফ মুখস্থ করে ফেলেছে। হাফেজ আল-আমিন ও ফয়সাল আমাদের ৩০০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারা দুই জন মাশাআল্লাহ অসম্ভব মেধাবী। তাদের কোরআন তেওয়ালাত উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে তোলে। এখন পবিত্র কোরআনকে এক নজর দেখতে প্রবল ইচ্ছা তাদের।

শিক্ষক মাওলানা বজলুল হক আজহারী বলেন, শিক্ষকরা একটি আয়াত বলে দেওয়ার পর সেটি শুনে ৩০ পারা পবিত্র কোরআন মুখস্ত করে তারা। তারা দুইজন আমাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা, বাহিরের অনেকে বুঝতোও না তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মহান আল্লাহ যেনো তাদের বিশেষ রহমতে পবিত্র কোরআনকে তাদের অন্তরে গেঁথে দিয়েছেন।

দুই সহোদর হাফেজের মা রূপবান বেগম জানান, স্বামী হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন দুই সন্তানকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দেই। হুজুররা আমার সন্তানদের কোরআনে হাফেজ বানিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন