চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা তাদের আমানতের টাকা না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন ফলাফল পায়নি। আদালতের নির্দেশনাও যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহযোগিতা চেয়ে জরুরি একটি বৈঠকের আবেদন করেছেন আমানতকারীদের একটি দল।
প্রতিনিধি দলের ৪ সদস্যরা হলেন— পিপলস লিজিং ডিপোজিটর কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হুমায়ূন কামাল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি রানা ঘোষ।
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক জানান, ‘পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লি.’ কোম্পানীটি একটি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানীটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ও মহামান্য হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে ‘রিকন্সট্রাকশন’ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের উল্লেখিত ‘পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লি.’ এর পক্ষে ‘আমানতকারী কাউন্সিল’ মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত একটি আমানতকারী কাউন্সিল এবং আমরা উক্ত কোম্পানীর উন্নয়নের জন্য সব সময় আন্তরিক সহযোগীতা প্রদান করে আসছি।
এরআগে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানী গুলশানে পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. এর প্রায় ৬ হাজার আমানতকারী নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে কোম্পানীতে সজ্জিত আমানত দ্রুত ফেরত পেতে প্রধান উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে আমানতকারীদের জমা আছে ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ের আমানত রয়েছে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই নানা অনিয়মের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এসব অর্থ ফেরত আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে পুরো আমানত ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না আমানতকারীরা। যে কারণে তারা প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করে ঋণ আদায় করে এবং অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ ফেরত চান।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে আসে, পিপলস লিজিং থেকে বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই জালিয়াতির মাধ্যমে সাবেক পরিচালকরা তুলে নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেন দেশ থেকে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। পিপলস লিজিংসহ চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পি কে হালদার মালিকানা নেওয়ার আগে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পাঁচ পরিচালককে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অপসারিতদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ১১৬ কোটি টাকা, সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিয়া ১০৭ কোটি টাকা এবং শামসুল আলামিনের পরিবারের তিন সদস্য আরেফিন সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন ২৯৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মর্মে তখন দুদকে প্রতিবেদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অবসায়ক নিয়োগের পরদিন ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই এসব ব্যক্তিসহ ১১ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। বাকিরা হলেন- পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাউথ বাংলা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল ও বিশ্বজিত কুমার রায়। এ ছাড়া সাবেক তিন কর্মকর্তা হলেন- কবির মোস্তাক আহমেদ, নিপেন্দ্র চন্দ্র পন্ডিত ও মো. শহিদুল হক। পরে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি পিপলস লিজিংয়ের সাবেক ৪৬ পরিচালক ও ১৭ কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ