দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা পাচার, জাবেদের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : দুবাইয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা (বর্তমান বাজার মূল্য) অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (৫৬) বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

পাচার করা ওই অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপনা এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে সিআইডি।

অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানায় সিআইডি বাদী হয়ে নিয়মিত মামলা দায়ের করে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ১২ জানুয়ারি ২০১৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ৩ বারের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

অনুসন্ধানকালীন প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল বর্ষা দক্ষিণ ৩, বারশা দক্ষিণ, বারশা দক্ষিণ ৪, থানিয়া ৫, জাদ্দাফ, হাইবা ৬, উপসাগরীয় বাণিজ্যিক, খায়রান, ইয়ালায়েস ২, বুর্জ খলিফা, জাবাল আলী, ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড, জাবেল ২, মার্সা দুবাই, মে’আইসেম প্রথম, নাদ আল শেবা প্রথম, ওয়াদি আল সাফা ৩ সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। যার মূল্য ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম।

এছাড়া তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে দুবাইয়ের আল বর্ষা দক্ষিণ ৩ এলাকায় “কিউ গার্ডেনস বুটিক রেসিডেন্সেস-ব্লক বি” নামে দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়, যার মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।

এছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের ২টি হিসাবসহ মোট ৪টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়।

ব্যাংক হিসাবগুলোতে বিভিন্ন অংকের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়, যা তৎকালীন সময়ের মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমীলা জামান এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পারস্পরিক যোগসাজশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (দুবাই) রাস আল খাইমাহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমতিক্রমে বিল্ডিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশান ম্যাটারিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য জেবা ট্রেডিং এফজেডই এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য র‍্যাপিড র‍্যাপ্টর এফজেডই নামে ২টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিনিয়োগ এবং পরিচালনার তথ্য পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের নিমিত্তে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর (জাভেদ) অনুকূলে সরকার কর্তৃক কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এভাবে তিনি বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছেন; যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগটির অনুসন্ধান শেষে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার ও স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে সিএমপির কোতয়ালী থানায় সিআইডি বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত মামলা দায়ের করে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) এর ৪(২)।ধারায় দায়ের করা মামলা নম্বর- ১০।

অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top