চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নৌপরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডে চারজন মারা গেছেন। যেকোনো প্রাণহানি দুঃখের ব্যাপার। পরপর দুটি ঘটনার কারণে মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কারণ এখন পরিস্থিতি একটু অস্থিতিশীল। তাই সন্দেহ দূর করতে জন্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারিকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের পৃথক তদন্ত কমিটি করা হবে। ১০ সদস্যের এ তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। তারা এখানে আসবেন, তদন্ত শুরু হবে, জাহাজগুলো দেখবেন। সন্দেহজনক কিছু আছে কি না- কী হয়েছে সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কথা বলতে চাই না। আপনারা অনুসন্ধান পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অনুসন্ধান রিপোর্ট হাতে পেলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামে বিএসসির কার্যালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘জাহাজে আগুন লেগেছে, তাই কিছু সেফটির বিষয় দেখতে হবে। এরপর বাংলার সৌরভ থেকে অপরিশোধিত তেল স্থানান্তর করা হবে। বিপিসিকেও বলেছি, টার্মিনালের ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘গত শুক্রবার সাড়ে ১২টার সময় বাংলার সৌরভে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এমডি আমাকে জানিয়েছেন। প্রতিটি মুহূর্তে কী হচ্ছে জানতে পারছিলাম। বিএসসি থেকে তদন্ত করতে বলেছি। জাহাজের ইনস্যুরেন্সের বিষয় আছে। তারপর একজন মারা গেছেন। তিনি আগুনে পুড়ে মারা যাননি। পানি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর উদ্ধার করা হলেও ট্রমার কারণে মারা গেছেন। দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডে চার জন মারা গেছেন। যেকোনও প্রাণহানি দুঃখজনক।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলার সৌরভ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল লাইটারিংয়ের জন্য বিএসসির এমডি তাৎক্ষণিক জাহাজ ভাড়া করেছেন। ঘটনা ঘটার আগেই এমডি বলেছিলেন, বাংলার সৌরভের শেষ ট্রিপ বা সেবা ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে। আমার ভয় ছিল, তেল ব্লাস্ট হলে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেত। নেভি, কোস্টগার্ড, পোর্ট অথরিটি দ্রুত সময়ে গিয়ে এ আগুন নিভিয়েছে। নেভাল চিফ ভোর ৫টায় রিং করে জানিয়েছেন সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছেন। নেভাল কমান্ডার, বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সারাক্ষণ কথা হয়েছে। সাড়ে ৪টায় আমাকে বলেছেন, সবাইকে রেসকিউ করা হয়েছে। এত বড় দুর্ঘটনা, অনেক কিছু হতে পারতো। বিএসসির লোকজন বলেছে, এক হয়ে কাজ করবে। ওনাদের প্ল্যান ও আমার ইচ্ছে, বিদেশি যারা আসবে তাদের বলবো, জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করো। কিছু দিন আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বলেছি, পাট ও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করতে।’
চীন থেকে ছয়টি জাহাজের পরিবর্তে চারটি জাহাজ সংগ্রহে অর্থের নয়-ছয় হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে এম সাখাওয়াত বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি টিম কাজ করছে, দাম নির্ধারণের জন্য। আমরা দাম কমানোর চেষ্টা করছি। কে টাকা নিয়ে গেলো তা বের করা মুশকিল। কাউকে টাকা দিয়ে থাকলে কীভাবে বের করবো! ডলার ছিল ৯০ টাকা। তদন্ত হবে। প্রকল্প বন্ধ থাকলে জাহাজ তো পাবো না। এ মন্ত্রণালয়ে অনেক প্রকল্প হচ্ছে। এ প্রকল্প এখন বন্ধ করে দিলে যে টাকা অপচয় হয়েছে- তা আপনার, আমার। গলায় কাঁটা লেগেছে, গিলতে হবে। আমি তো বলেছি, চুরির মহাসমুদ্র না, প্রশান্ত মহাসাগর। আমাদের কাছে যে ডকুমেন্ট আছে তা দুদকের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুদক তদন্ত করবে।’
তিনি বলেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ওনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। আপনি কখনও স্বপ্ন দেখেছেন, ৪০০ কোটি টাকা। আমি তো দেখিনি।’
বিএসসিতে জাহাজের বহর বাড়ানো হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএসসির দুটি জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর বর্তমানে বহরে জাহাজ আছে মাত্র পাঁচটি। এ পাঁচটি জাহাজে প্রচুর লাভ করছে। একটিও বাংলাদেশে নেই। জ্যামাইকাসহ বিভিন্ন দেশে এসব জাহাজ আছে। বিএসসিতে জাহাজের বহর আরও বড় হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা যতদিন আছি, একটা কাজ করতে পারি সেটা হচ্ছে, দুর্নীতি কমানো।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ