দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি: কেন্দ্রের শোকজ খেলেন চট্টগ্রামের বৈছাআ নেতা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক:  বেশি না, মাত্র দুই কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) এর সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন। সেই চাঁদা চাওয়াটাই কাল হলো তার। এই ঘটনায় তাকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সাময়িক স্থগিতাদেশ ও কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে বৈছাআ কেন্দ্রীয় কমিটি।

আজ শনিবার (৫ জুলাই) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশিদ) এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিবকে সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছেন এক নারী। শনিবার (৫ জুলাই) সকালে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বরাবর চিঠি দেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী। যিনি জামায়াতে ইসলামীর বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি নওশেদ জামালের স্ত্রী বলে জানা গেছে।

চিঠিতে ওই নারী উল্লেখ করেন— দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় পুলিশে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন। গেলো বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

তবে পুলিশের তথ্যমতে নওশেদ জাতীয় শ্রমিক লীগ মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

চিঠিতে রিয়াজুল জান্নাত আরো উল্লেখ করেন— নওশেদ জামাল চট্টগ্রামে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি জামায়াতে ইসলামীর রুকন পাশাপাশি বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি।কিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নেজাম (নিজাম) উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তার স্বামীর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তার স্বামীকে ফাঁসানো হয়।

চিঠিতে রিয়াজুল জান্নাত একটি ভিডিওর কথাও উল্লেখ করেন। ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে নিজাম উদ্দিনকে একটি কক্ষে বসে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘আরে ভাই শোনেন, পুলিশ পারে না যে এমন কিছু নাই…। আমি বলতে চাচ্ছি, আপনার যার প্রতি ক্ষোভ, যাদের প্রতি ক্ষোভ, ওই তিনজনকে হলেই তো হইছে…আপনি যদি চান ওই তিনজনকে…করে দিতে পারবে …দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন’’।

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট করে নিজাম উদ্দিন দাবি করেছেন তিনি চাঁদা চাননি। এ ছাড়া ওই নারীর উল্লিখিত ভিডিওটি অনেক পুরোনো।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন— ভিডিওটি পতেঙ্গা থানা এলাকার। চার থেকে পাঁচ মাস আগের। অথচ ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র দুই দিন আগে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায়। ভিডিওতে কোথাও “টাকা দাবির” তথ্য না থাকার পরও এটিকে “চাঁদাবাজির” তকমার ঢাল হিসেবেই ব্যবহার করছে একটি চক্র।

নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি ওসিকে বলেছি, আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট হলে নওশেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, আর না হয় ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারা এখন দাবি করছেন, আমি তাকে ধরিয়ে দিয়েছি’।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানায় কিংবা উপকমিশনার কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অথবা পুলিশ কমিশনার এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে বৈছাআ কেন্দ্র থেকে পাঠানো শোকজ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়— সংগঠনের নীতিমালা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী কিছু কার্যকলাপে জড়িত হওয়া সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উক্ত প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে সংগঠনের সদস্য সচিব (চট্টগ্রাম মহানগর) পদ থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, কেন নিজাম উদ্দিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না—সে বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা আগামী ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে, সংগঠন এই নেতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top