নিজস্ব প্রতিবেদক : দুয়ারে কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। শরতের কুয়াশা ভেজা মিষ্টি সকালে শিউলি ফুলের সুবাস মাখা শারদীয় বাতাস চুপি চুপি বলছে, দুর্গা মা আসছে পৃথিবীতে। চারিদিকে শোনা যায় ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে বাজছে মায়ের আগমনী বার্তা। মন্দিরে মন্দিরে পূজার সাজ সাজ রব।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া এই দু্র্গোৎসব এবার কিভাবে অনুষ্ঠিত হতে চলছে? পূজা নিয়ন্ত্রণে আয়োজক বা সরকারের প্রস্তুতিই বা কেমন? তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
বুধবার ২ অক্টোবর শুভ মহালয়া। পূজা আয়োজকদের নির্দিষ্ট সময়ে হস্তান্তর করতে হবে প্রতিমা। তাই নির্ঘুম রাত কাটছে প্রতিমা শিল্পীদের। প্রতিমায় বুলিয়ে যাচ্ছেন শেষ মুহুর্তের তুলির আঁচড়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, গতবারের চেয়ে পূজা কমেছে ৪টি। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে প্রতিমা ও ঘট পূজা মিলিয়ে ২৯২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর ২৯৬টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার চকবাজারে দুটি, পাঁচলাইশে একটি এবং অন্য একটি থানার একটিসহ মোট ৪টি পূজা হচ্ছে না। বাকি ২৯২ মণ্ডপেই পূজা হবে। ২০২২ সালে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ২৮২টি, ২০২১ সালে ২৭৬টি।
তবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার চ্যালেঞ্জসহ দেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে এবার দুর্গোৎসবের আমেজ, আনন্দ,আয়োজন বা নিরাপত্তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা চলছে। পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। পূজা আয়োজন যাতে নির্বিঘ্ন হয় সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আয়োজকদেরকেও ১৫টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পূজার সময় সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এলাকার প্রতিটি পূজামণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।
পূজার আয়োজন নিয়ে মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য্য চাটগাঁ নিউজকে বলেন, পূজা আয়োজনে সরকার সকল পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বিঘ্ন নিরাপদ আনন্দময় পূজা উদযাপনে দল, মত নির্বিশেষে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। বাংলার হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের মননে। পূজার নিরাপত্তায় প্রশাসনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল চাটগাঁ নিউজকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়, এটা আপামর বাঙালির উৎসব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিময় পরিবেশে পূজা আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলের আন্তরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পূজা সফল সার্থক হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে দুর্গোৎসব আয়োজন করতে চাই। তাহলে কোন ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ পাবে না। শান্তিময় পরিবেশে পূজা আয়োজনে স্ব স্ব কমিটিকে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মেনে রাত ১১টার মধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে বলা হয়েছে। মণ্ডপে ডিজে গান না বাজাতে বলা হয়েছে।
নগরের বেশ কয়েকটি মৃৎ শিল্পালয় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রতিমার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন। শিল্পীরা প্রতিমায় শেষ মুহুর্তের তুলির আঁচড় বুলাচ্ছেন।
সদরঘাটের স্বর্গীয় দুলাল পাল প্রতিমালয়ের স্বত্বাধিকারী সুজন পাল বলেন, এখন প্রতিমার ফাইনাল কাজ চলছে। চোখ ফোটানো, অলংকরণ, বস্ত্র দান এসব কাজ করছি। দুয়েক দিন পর থেকেই প্রতিমা ডেলিভারি শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার ডেলিভারি দিতেই হবে।
প্রসঙ্গত, পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ২ অক্টোবর (বুধবার) শুভ মহালয়া। মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় পূজার ক্ষণগণনা। ৮ অক্টোরব (মঙ্গলবার) মহাপঞ্চমী, ৯ অক্টোবর (বুধবার) ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর (রোববার) বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসব।
শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবার স্বামীর বাড়ি কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি মর্ত্যে নাইওরে আসবেন দোলা বা পালকিতে। বলা হয়, দোলায় আগমনের ফল পৃথিবীতে রোগ-শোক আর দুর্ভোগ। আর ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার ফল ছত্রভঙ্গ। অর্থাৎ ঝড়-তুফান, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বাড়বে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ