নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েক দফা জ্বালানির দাম কমলেও গণপরিবহনে এর প্রভাব নেই। আগের নির্ধারিত হারেই আদায় হচ্ছে গণপরিবহনের ভাড়া। ঈদকে কেন্দ্র করে উল্টো অতিরক্তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় ৩১ মে তেলের দাম কমিয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা প্রজ্ঞাপন জারি করে। যা ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। বলা হয়, প্রতি লিটার ডিজেল ১০৪ টাকা থেকে কমিয়ে ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ১২১ টাকা থেকে কমিয়ে ১১৮ টাকা ও অকটেনের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা করা হয়েছে।
এর আগে মে মাসের জন্য প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৪ টাকা, অকটেন ও পেট্রোলের দাম ১ টাকা করে কমিয়ে যথাক্রমে ১২৫ টাকা এবং পেট্রোল ১২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগে মার্চ ও এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়। আর ফেব্রুয়ারিতে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে বেড়েছিল ১ টাকা।
নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী—চট্টগ্রাম মহানগরের ১ নম্বর রুটে কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে নিউ মার্কেট (১০ কিলোমিটার) ২৫ টাকা, ২ নম্বর রুটে কালুরঘাট থেকে নিউ মার্কেট (১৪ কিলোমিটার) ৩৫ টাকা, ৩ নম্বর রুটে ফতেয়াবাদ থেকে নিউমার্কেট (১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার) ৩৬ টাকা, ৪ নম্বর রুটে নিউমার্কেট থেকে ভাটিয়ারি (১৫ কিলোমিটার) ৩৮ টাকা, ৫ নম্বর রুটে নিউমার্কেট থেকে বিমান বন্দর (১৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার) ৪৭ টাকা, ৬ নম্বর রুটে লালদীঘির পাড় থেকে সী বিচ (১৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার) ৪২ টাকা, ৭ নম্বর রুটে কোতোয়ালি থেকে ভাটিয়ারি (১৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার) ৪০ টাকা, ৮ নম্বর রুটে নিউ মার্কেট থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত (৮ কিলোমিটার) ২০ টাকা, ১০ নম্বর রুটে কালুরঘাট থেকে সী বিচ (২৫ কিলোমিটার) ৬৩ টাকা এবং ১১ নম্বর রুটে ভাটিয়ারি থেকে সী বিচ (২৩ কিলোমিটার) ৫৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
আন্তঃজেলা ভাড়া তালিকা অনুযায়ী- ৪০ আসন বিশিষ্ট গণপরিবহনের ভাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোনাপুর ভায়া ফেনী ৩৯৮ টাকা, কুমিল্লা ভায়া ফেনী ৪১৬ টাকা, চাঁদপুর ভায়া ফেনী ৫১৬ টাকা, লক্ষীপুর ভায়া ফেনী ৪২৭ টাকা, নবীনগর ভায়া ফেনী ৫৮১ টাকা, চরজব্বর ভায়া স্টিমারঘাট ভায়া সোনাপুর ৪১৬ টাকা, রামগঞ্জ ভায়া ফেনী ৪৩৭, ফেনী ভায়া রায়পুর ৪৭৬ টাকা, আশুগঞ্জ ভায়া ফেনী ৬৮৬ টাকা, হোমনা ভায়া ফেনী ৫৮৭ টাকা, ফরিদগঞ্জ ভায়া ফেনী মজু চৌধুরীর হাট ৫৫১ টাকা, কানকির হাট ৩১৯ টাকা, মাইজদি ভায়া বসুরহাট ৩৭০ টাকা,চাটখিল ভায়া ফেনী ৪২২ টাকা।
তবে কাগজের ভাড়ার সাথে বাস্তবতার পার্থক্য বহুদূর। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো কর্মজীবীরা পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগে গণপরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় করছে।
চট্টগ্রাম থেকে ফেনী যাওয়ার টিকেট কাটা যাত্রী মো. আহমেদ নিজামী বলেন, ২০০ টাকার ভাড়া এখন নিচ্ছে ৩৫০ টাকা। কাউন্টারে কোন কথা বলা যাচ্ছে না। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটতে হয়েছে। পরিবার সাথে আছে। প্রতি ঈদে কোরবানে গাড়ি ভাড়ার এ ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এরপরও বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মাসুদ আলম বলেন, গতবছর গণপরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে গণপরিবহনের ভাড়া ওই তালিকা অনুযায়ী চলছে। এ মুহূর্তে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের কোন পরিকল্পনা নেই।
বিষয়টি নিয়ে বিআরটি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারি পরিচালক মো. মেহেদী বলেন, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছে রয়েছে। সেই অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জ্বালানির মূল্য কমানোর প্রেক্ষিতে গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর বিষয়ে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তেলের দাম কমছে লিটারে মাত্র ২/৩ টাকা। আর গত একবছরে টায়ারের দাম বাড়ছে ১০ হাজার টাকা করে। একই হারে দাম বেড়েছে গাড়ির যন্ত্রপাতির। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে সব ধরণের মোটর পার্টসের দাম বেড়ে চলেছে। কিন্তু গাড়ির ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। ধরেন, একটা গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী যায়। কিন্তু নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম আসার সময় পুরো খালি আসতে হয়। কিন্তু তেল তো জ্বলছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ