‘তোর মতো সাংবাদিককে মেরে ফেললে কী হবে’— বলেই পেটালো দুর্বৃত্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: “রেজাউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিউজ করেছিস কেন? তোকে মেরেই ফেলব। তোর মতো সাংবাদিককে মেরে ফেললে কী হবে?”—এমন হুমকি দিয়ে এক সাংবাদিককে প্রকাশ্য পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা।

আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে এই হামলার শিকার হন সময়ের কন্ঠস্বর ও দৈনিক সময়ের আলো’র বাঁশখালী প্রতিনিধি মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের অভিযোগ, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা এবং তাকে কৌশলে ডেকে এনে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হামলাকারীদের একজন নিজাম উদ্দিন আমাকে ফোন করে বলে, তৈলারদ্বীপ সেতু কেন টোলমুক্ত হচ্ছে না, সেটা নিয়ে নিউজ করা দরকার। আমি আপনাকে কিছু তথ্য দেব, আপনি আন্দরকিল্লা আসুন। তার কথা অনুযায়ী আমি সেখানে পৌঁছানো মাত্রই আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় এবং আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য রাসেল নামে একজন গলা টিপে ধরে আর নিজাম আমার পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এটা শতভাগ পূর্বপরিকল্পিত হামলা। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

গত ৪ জুলাই বাঁশখালীর কুতুবদিয়া চ্যানেলে অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে বেলাল উদ্দিনের একটি প্রতিবেদন একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে কোস্ট গার্ডের অভিযানে দুটি ড্রেজার জব্দ, ৪ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক মাঝিকে কারাদণ্ড দেওয়ার তথ্য ছিল। সংবাদের একাংশে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ড্রেজারের কথা উল্লেখ ছিল, যা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

হামলার সময় দুর্বৃত্তরা এই সংবাদের কথা-ই উল্লেখ করে এবং রেজাউল হক চৌধুরীর নাম নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে বাঁশখালী উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন এবং রেজাউল হক চৌধুরীর অনুসারী মোহাম্মদ নুরুন্নবীকে শনাক্ত করেছেন বলে জানান বেলাল উদ্দিন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ‘বেলাল হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসর, এই কারণে তাকে ধরে পুলিশের কাছে তুলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে পালিয়ে গেছে। তাকে পাবলিক মেরেছে।’

তবে বেলাল উদ্দিন সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলার বাদী। সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই আন্দোলনের মামলার বাদী কীভাবে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হয়, সেই প্রশ্নের জবাবে নুরুন্নবী কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য ,২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে রেজাউল হক চৌধুরী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। গত ৫ আগষ্টের পর অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top