‘তোকে গুলি করে মারবো না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারবো’
মুঠোফোনে ‘সন্ত্রাসী’ রায়হান

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ‘তোকে গুলি করে মারবো না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারবো’ বলে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে মোহাম্মদ রায়হান নামে পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড এক সন্ত্রাসী হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে একটি বিদেশি নাম্বার থেকে প্রথমে ফোন করে এবং পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে এ হুমকি দেওয়া হয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে এ হত্যার হুমকি দেওয়া হয় পাথর ব্যবসায়ী মো. একরামকে। আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) এ নিয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও রাউজানে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে একের পর এক খুনের ঘটনায় বারবার পুলিশি তদন্তে রায়হানের নাম উঠে এসেছে। একের পর এক হত্যা মামলায় তাকে আসামি করেছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাব তার হদিস না পেলেও ঠিকই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড।

যদিও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, মহানগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম তদন্তে উঠে এসেছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। খুব শিগগিরই তাকে আমরা ধরতে পারবো।

এদিকে ভুক্তভোগী মো. একরাম বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার সময় একটি বিদেশি নম্বর থেকে ফোন আসে। রিসিভ করার পর বুঝতে পারি, সন্ত্রাসী রায়হানের কল। তিনি আমাকে খুন করার হুমকি দিয়েছেন। পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় রায়হান বলে, ‘অপেক্ষা কর, ওয়েট অ্যান্ড সি। তুকে গুলি করে মারবো না, ব্লেড দিয়ে কুচিয়ে কুচিয়ে মারবো।’ মেসেজে রায়হান আরও লিখেছেন, ‘তর মামলার এক নম্বর আসামি আমি, ধরে রাখ। আমি কতটা খারাপ; যেদিন চোখের সামনে দেখবি, সেদিন বুঝতে পারবি। স্বাগতম মুখে না আওয়াজে হবে।’

একরাম আরো বলেন, তিনি গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ তাকে হুমকি দেন। ওই হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর মামলা তুলে নিতে তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, হুমকির পর রাতে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে বলার সঙ্গে সঙ্গে সোয়াত টিমসহ পুলিশের দল বাসার সামনে পাহারায় রয়েছে। ভয়ে তার স্বামী এখন বাসা থেকে বের হচ্ছে না। বের হলে সঙ্গে পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘ব্যবসায়ী একরামকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এর আগেও হুমকির বিষয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। এখন বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

এর আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ৫ নভেম্বর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেওয়া সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিনদিন আগে সরোয়ারকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, ‘রায়হান সরোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’

তারও আগে গত ২৫ অক্টোবর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের চারাবটতলে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়।

চলতি বছরের ২৫ জুলাই নগরীর কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মুঠোফোনে হুমকি দেন রায়হান। দোকানিকে বলেন, ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব। আকবর সি বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি। চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার মো. ইউনুস নামের এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডে রায়হান ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। জীবিত অবস্থায় মোবাইল ফোনে আলমগীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলমগীরকেও রায়হানের নাম উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজনই কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তার অস্ত্রভাণ্ডারের দেখভাল করছেন এবং সাজ্জাদের চাঁদাবাজির সম্রাজ্যও দেখাশোনা করছেন।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top