চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ইরানের তেহরানে থাকা প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। এদের মধ্যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা শ’খানেক বাংলাদেশিদের স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দূতাবাসের কূটনীতিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কাজ চলছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব জানান, ইরানে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি আছে। এদের মধ্যে আমরা যাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা তেহরানে আছেন। এই সংখ্যাটা ৪০০ হবে। তেহরানে কিছু বাংলাদেশি আছেন, যারা এখন এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাদেরকে আর আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য এখন আমরা কাজ করছি, যাতে এরা নিরাপদে থাকতে পারে।
রুহুল আলম বলেন, তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার যারা আছেন তারা অত্যন্ত হুমকির মুখে পড়েছে। তেহরানে থাকা বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। তাদেরকে তেহরান থেকে দূরে কোথাও কিছু সময়ের জন্য রাখার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তেহরানে আছে এমন ১০০ জনের মতো বাংলাদেশি যোগাযোগ করেছে। তারাসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করব।
তিনি বলেন, এখনকার সিদ্ধান্ত হলো, তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকতে পারে তারা যেন নিরাপদ স্থানে সরে যায়। এই মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিমান যোগাযোগ বন্ধ এবং স্থলপথে যাওয়া হয়তো সম্ভব কিন্তু তা নিরাপদ হবে না। যার জন্য আমরা তাদের তেহরান থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
স্থানান্তরের পরের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে রুহুল আলম জানান, এই মুহূর্তে আমাদের পদক্ষেপ হচ্ছে, বাংলাদেশিদের তেহরান থেকে যত দূর গেলে নিরাপদে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, তাদের জন্য অস্থায়ী ভাড়া করা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। পরবর্তী সময়ে তারা যদি পাকিস্তানে যেতে চায় বা তুরস্কে যেতে চায়, আমরা পৌঁছে দেব।
এদিকে জানা গেছে- সবমিলিয়ে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এছাড়া, ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সবমিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।
এ প্রসঙ্গে রুহুল আলম জানান, ইরানে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি আছেন। এদের মধ্যে বড় সংখ্যক বাংলাদেশি ইরানি মেয়েদের বিবাহ করে ওইখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আরেকদল বাংলাদেশি ওখানকার সমুদ্র অঞ্চলে মাছ ধরাসহ ছোট-খাটো কাজ করেন। তাদের মধ্যে অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। কিছু বাংলাদেশি ইরানের ডিটেনশন সেন্টারে আছে। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি আছেন পেশাজীবী, যারা গণমাধ্যম ও চিকিৎসা সেবা খাতে কাজ করছেন। আরও কিছু বাংলাদেশি আছেন, যারা ওখানে ভ্রমণে রয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী আছেন।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ