তালাবদ্ধ সাংবাদিক সংগঠনের কার্যালয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ সাংবাদিকদের
গণমাধ্যমে ‘মব’ সন্ত্রাস

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন, মব সন্ত্রাস ও হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা সাংবাদিকদের কারাবন্দি, হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি ও মিথ্যা মামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে জামিন ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সরকারকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) ৫১ জন সাংবাদিকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এ বিবৃতিটি পাঠান বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর সম্পাদক তৈমুর ফারুক তুষার।

বিবৃতিদাতা সাংবাদিকরা হলেন— ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক সৈয়দ শুক্কুর আলী, সিনিয়র সাংবাদিক নজরুল কবীর, বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আকতার হোসেন, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন ইমন, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, ডিআরইউর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, সহসভাপতি মাহমুদুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সাংবাদিক জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুজ্জামান সম্রাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী, সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়— সাংবাদিকদের নামে হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, সংবাদপত্র কার্যালয়ে হামলা, এমনকি গরু জবাই করে ‘জিয়াফত’ করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, যা গণমাধ্যমের ওপর সরাসরি আক্রমণ। চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং বিভিন্ন মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরবতা উদ্বেগজনক।

উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা জানান, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত অন্তত ১০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। ১১ মাসে মামলা হয়েছে ৪১২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৯ জন। একই সময়ে ১৬৮ জনের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার বা সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ৩০০’র বেশি সাংবাদিকের বিদেশ গমন নিষিদ্ধ এবং শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের মাসের পর মাস বিনা বিচারে কারাবন্দি রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জামিন পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলেও, সাংবাদিকরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পার হলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, চাকরির সুরক্ষা বা স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। বরং ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো জায়গায় সাংবাদিক সংগঠনের (ডিইউজে ও সিইউজে) কার্যালয় ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ থাকা দুঃখজনক এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

বিবৃতিদাতারা সাংবাদিকদের ওপর চলমান নিপীড়নের অবসান, গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের জামিন, হত্যা-নির্যাতনের বিচার এবং গণমাধ্যমকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ—এর কণ্ঠরোধ করা মানেই মানুষের বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

 

Scroll to Top